এবার নেপালের প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের গুঞ্জন

ছবি: সংগৃহীত
নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিবাদে শুরু হওয়া গণবিক্ষোভ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে চলমান এই আন্দোলনের মুখে মঙ্গলবার (০৯ সেপ্টেম্বর) সকালে পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি।
তবে প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পাউডেলের পদত্যাগ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
গত সপ্তাহে ওলি সরকার ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যার মধ্যে ছিল ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম ও এক্স। সরকারের দাবি ছিল, এসব প্ল্যাটফর্ম “রেজিস্ট্রেশনবিহীন” এবং “ভুয়া তথ্য ছড়ানো ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত” হচ্ছে। তবে তরুণদের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। বিশেষ করে “নেপো কিড” ট্রেন্ডে রাজনৈতিক নেতাদের সন্তানদের বিলাসী জীবনযাপন নিয়ে সমালোচনার পর থেকেই উত্তেজনা বাড়তে থাকে।
৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে মাত্র দুই দিনের মাথায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২০ জন, আহত হয়েছেন ৪০০ জনের বেশি। পুলিশের গুলিতে নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই তরুণ। আন্দোলনকারীরা সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, প্রেসিডেন্টের বাসভবন, শের বাহাদুর দেউবা ও পুষ্প কমল দহলের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরজু দেউবা রানার মালিকানাধীন একটি স্কুলেও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
মঙ্গলবার সকালে প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। তার পদত্যাগের আগে সেনাপ্রধান জেনারেল আশোক রাজ সিগডেলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি সেনাবাহিনীর সহায়তা চান।
জেনারেল সিগডেল জানান, ওলি পদত্যাগ না করলে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এরপরই ওলি পদত্যাগ করেন এবং সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে নিরাপদ গন্তব্যে রওনা দেন।
সূত্র জানায়, তিনি চিকিৎসার অজুহাতে দুবাই যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন এবং হিমালয় এয়ারলাইন্সের একটি বিমান প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ওলির পদত্যাগের পরপরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক, কৃষিমন্ত্রী রামনাথ অধিকারী এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রদীপ পাউডেলও পদত্যাগ করেন। ক্ষমতাসীন জোট সরকারের ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বড় রাজনৈতিক দলগুলো জোট থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের চিন্তা করছে।
আরও পড়ুন: নেপালে সহিংস বিক্ষোভ: সেনা হেলিকপ্টারে সরানো হচ্ছে মন্ত্রীদের
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টিভি ও ইন্ডিয়া টুডে দাবি করেছে, প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পাউডেলও পদত্যাগ করেছেন।
তবে তার দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই খবর ভিত্তিহীন এবং তিনি এখনও দায়িত্বে রয়েছেন।
যদিও এমএসএন ও নিউজ২৪ সহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ নিশ্চিত করেছে।
ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট থেকে সব ধরনের ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা ড্রোন, আতশবাজি ও লেজার লাইট ব্যবহার করে বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বুদ্ধ এয়ারসহ সব দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনস ফ্লাইট বাতিল করেছে। ইন্ডিগো, স্পাইসজেট ও এয়ার ইন্ডিয়া তাদের ফ্লাইট স্থগিত করেছে এবং যাত্রীদের রিফান্ড ও পুনরায় বুকিংয়ের সুযোগ দিয়েছে।
দেশজুড়ে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ১২টি সামরিক উড়োজাহাজে করে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সেনাপ্রধান সিগডেল জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজনৈতিক সমঝোতা প্রয়োজন।
একটি যৌথ বিবৃতিতে “জেন-জি” আন্দোলনের নেতারা বলেছেন, তারা একটি সর্বজনগ্রহণযোগ্য বেসামরিক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন চান।
তাদের দাবি, এই আন্দোলন শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে নয়, বরং দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক জবাবদিহিতার অভাবের বিরুদ্ধে।
নেপালের এই রাজনৈতিক সংকট দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আগামী কয়েক সপ্তাহে দেশটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি