News Bangladesh

তথ্য-প্রযুক্তি ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:১৫, ৩১ আগস্ট ২০২৫

সেপ্টেম্বর থেকে ফোরজিতে সর্বনিম্ন ১০ এমবিপিএস

সেপ্টেম্বর থেকে ফোরজিতে সর্বনিম্ন ১০ এমবিপিএস

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের মোবাইল ও ফিক্সড ইন্টারনেট সেবার মান নিশ্চিত করতে বিটিআরসি নতুন কোয়ালিটি অব সার্ভিস (QoS) নীতিমালা অনুমোদন করেছে। এই নীতিমালা আগামী সেপ্টেম্বর থেকে মোবাইল অপারেটর, এনটিটিএন এবং আইএসপি সেবাদাতাদের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে কার্যকর হবে।

রবিবার (৩১ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টা ও টেলিযোগাযোগ-বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এক ফেসবুক পোস্টে জানান, দেশের টেলিযোগাযোগ সেবা নিম্নমানের থাকার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে নতুন এই QoS নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। এটি বিটিআরসি কমিশনের সভায় মোবাইল অপারেটর, এনটিটিএন এবং আইএসপি সেবাদাতাদের জন্য অনুমোদিত হয়েছে।

ফয়েজ আহমদ বলেন, নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ফোরজির সর্বনিম্ন ডাউনলোড গতি ১০ এমবিপিএস নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া কলড্রপের হার কমানো হয়েছে এবং সেবার অন্যান্য মানদণ্ড কঠোরভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। বিটিআরসি প্রতি মাসে আগের মাসের নেটওয়ার্ক পারফরম্যান্স এবং হেলথ রিপোর্ট সংগ্রহ করে পর্যবেক্ষণ করবে।

নেটওয়ার্ক পারফরম্যান্সের মূল মানদণ্ডে বলা হয়েছে, নেটওয়ার্ক পর্যায়ে কল সেটআপ সাকসেস রেট কমপক্ষে ৯৯ শতাংশ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৯৮ শতাংশ থাকতে হবে। কলড্রপের হার ২জি নেটওয়ার্কে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ, উপজেলা পর্যায়ে ১.৫ শতাংশ সীমিত রাখা হবে। ফোরজি ডেটা সংযোগ সফলতার হার নেটওয়ার্ক পর্যায়ে ৯৯ শতাংশ, জেলা পর্যায়ে ৯৮.৫ শতাংশ রাখতে হবে। গড় ব্যবহারকারী ডাউনলোড গতি নেটওয়ার্কে ৩.৫ এমবিপিএস, জেলা পর্যায়ে ২.৫ এমবিপিএস নিশ্চিত করতে হবে।

ড্রাইভ টেস্টে ভয়েস সেবায় কলড্রপ সর্বোচ্চ ২ শতাংশ রাখা হবে এবং VoLTE (ভয়েস ওভার এলটিই) ব্যবহারকারীর মান সূচক ন্যূনতম ৩.৫। ডেটা সেবায় ডাউনলোড সর্বনিম্ন ১০ এমবিপিএস এবং আপলোড ২ এমবিপিএস নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, অপারেটরদের প্রতি মাসে তাদের নেটওয়ার্কের মূল সূচক (KPI) জমা দিতে হবে। এসব সূচক তিন ভাগে বিভক্ত: অ্যাক্সেসিবিলিটি, রিটেইনেবিলিটি ও নেটওয়ার্ক ইন্টিগ্রিটি।

আরও পড়ুন: গুগল ফটোজে সহজ ছবি সম্পাদনার জন্য নতুন এআই সুবিধা

অ্যাক্সেসিবিলিটি: গ্রাহকরা কতটা সফলভাবে নেটওয়ার্কে প্রবেশ করছেন এবং কল সেটআপ হচ্ছে তা নিরূপণ করে। এর মধ্যে কল সেটআপ সাকসেস রেট, পেজিং সাকসেস রেট এবং ERB সেটআপ সাকসেস অন্তর্ভুক্ত।

রিটেইনেবিলিটি: কল বা ডেটা সেশন শুরু হওয়ার পর কতটা স্থিতিশীল থাকে তা পরিমাপ করা হয়। এর মধ্যে কলড্রপ রেট, VoLTE অস্বাভাবিক বিচ্ছিন্নতা, LTE নন-রিটেইনেবিলিটি এবং হ্যান্ডওভার সাকসেস অন্তর্ভুক্ত।

নেটওয়ার্ক ইন্টিগ্রিটি: নেটওয়ার্ক অবকাঠামোর কার্যকারিতা ও দক্ষতা নিরূপণ করা হয়। প্রতি বেস স্টেশনে LTE PRB ব্যবহার হার, ব্যবহারকারীর আপলিঙ্ক থ্রুপুট এবং সিকিউআই/আরএসআরকিউ মান অনুযায়ী ‘খারাপ স্যাম্পল’-এর শতকরা হার এখানে অন্তর্ভুক্ত।

বিটিআরসি সব সূচকের ফলাফল মাসভিত্তিক গড়ে নেটওয়ার্ক, জেলা ও উপজেলা স্তরে আলাদা জমা নিবে। পাশাপাশি সবচেয়ে খারাপ পারফর্ম করা ৫০টি সেলের আলাদা তালিকাও দাখিল করতে হবে।

ফিক্সড ইন্টারনেট ও টেলিফোনিতে কলড্রপ সর্বোচ্চ ১ শতাংশ, কল সেটআপ সাফল্যের হার ৯৯ শতাংশের বেশি, এবং কল সংযোগ সময় ৬ সেকেন্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। ইন্টারনেট সেবায় লোকাল ট্র্যাফিকের সংযোগ সময় সর্বোচ্চ ২৫ এমএস, ডেটা হারানোর হার ১ শতাংশ, এবং নেটওয়ার্ক প্রাপ্যতা ৯৯ শতাংশ বা তার বেশি নিশ্চিত করতে হবে। গ্রাহকের প্রান্তে ডাউনলোড-আপলোড স্পিড সাবস্ক্রাইব করা গতির অন্তত ৯৫ শতাংশ বজায় রাখতে হবে। এনটিটিএন অপারেটরদের ক্ষেত্রে ডেটা হারানো সর্বোচ্চ ০.০১ শতাংশ, ল্যাটেন্সি ৫ এমএস এবং সংযোগের জিটার ৩ এমএস রাখা হবে। ফাইবার নেটওয়ার্কে সেবার সমস্যা মহানগর এলাকায় ৪ ঘণ্টা, গ্রামীণ এলাকায় ৬ ঘণ্টার মধ্যে সমাধান করতে হবে।

গ্রাহক অভিযোগ সমাধানের ক্ষেত্রেও কঠোর মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। নেটওয়ার্ক-সম্পর্কিত নয় এমন অভিযোগ ২৮ দিনের মধ্যে সমাধান করতে হবে। গ্রাহকসেবা সেন্টারে আসা ৯০ শতাংশ কল ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে এবং সব কল ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে রিসিভ করতে হবে।

ফয়েজ আহমদ জানিয়েছেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে অপারেটরদের সেবার মান নিয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। একই সঙ্গে দুর্বল এলাকাগুলো দ্রুত চিহ্নিত করে সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে। বিশেষ করে গ্রামীণ ও শহরতলির এলাকায় সেবা উন্নয়নে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়