News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৯:৩৯, ৮ আগস্ট ২০১৯
আপডেট: ১৫:১৪, ৮ নভেম্বর ২০২০

বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরীর ফেসবুক স্ট্যাটাস

আঙ্গুল উঁচিয়ে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই

আঙ্গুল উঁচিয়ে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই

‘খোঁচা দিয়ে, আঙ্গুল উঁচিয়ে, ভয় দেখিয়ে লাভ নেই! পেশাদারদের রকমফের নেই! এভাবে পেশাদারিত্বের সাথে আমরা কাজ করে যেতে চাই।’ 

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক স্ট্যাটাসে এমনটিই জানিয়েছেন বেনাপোল কাস্টমস হাউজের কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরী।

বেলাল হোসেন চৌধুরীর ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু পাঠকে জন্য তুলে ধরা হলো- 

‘আমিতো ভালা না... ভায়াগ্রা ছাড়ি নাইতো! ওরাও জানত ছাড়বনা। তবু প্রাণান্তকর চেষ্টা! প্রথমে প্রলোভন। পরে শক্তি প্রদর্শন।  উচ্চ-নিম্ন চাপ, প্রভাব পেশী দর্শন! কোন সজ্জনের নির্দোষ সম্ভাষণ। নমনীয় হোন ছেড়ে দিন! সাধ্যের সকল কলা এ অসাধুর সাধন। সকল কৌশল ওষুধ অবশেষে ব্যর্থ বেমানান! অনড় বেরসিক কমিশনার! আড়াই হাজার কেজির কারবার! কেমনে নড়ে আবার! এক তোলা হলেও গলতোনা পাহারার! বেনাপোল টীম দুর্বার দুর্ণিবার!’

মাত্র পাঁচ মিনিট সময় পেলেই হতো। চলে যেত! যখন ঠিক ট্রাকে উঠে টান দিতে উদ্যত। আড়াই হাজার কেজি ভায়াগ্রা আমার দেশে ঢুকে যেত। কিংবা দেশ হয়ে পাচার হতো। নাহলে এনার্জি ড্রিংক, আয়ুর্বেদিক উত্তেজক ওষুধ বা অন্যকোনভাবে আমাদের খাবার হতো। তারুণ্য ও প্রজন্ম দেশ খেসারত দিত। আরো কত তরুণ তরুণী যৌন হিংস্রতার শিকার হতো!

গোপন সংবাদদাতা ধন্যবাদার্হ! ২৪ জুলাই ২০০ কেজির সংবাদ সম্মেলনের পর মুহূর্তেই এ খবর এলো। মালভর্তি ট্রাক ভেগে যেতে উদ্যত! সেদিন থেকে গতকাল অব্দি পেছনের কুশীলবরা নানা কৌশল কসরতে প্রমত্ত মত্ত। পালাতে তৈরি ট্রাক স্টার্ট দিয়ে ছুটতে উন্মত্ত।

ছাড়িনি! সাধু ইশারায জানান দেন, মূল্য দিতে হবে! আমরাও জানি! চোরাকারবারী ও সহচর ক্ষমতাবানরা অনেক কিছু পারেন। আগেও পেরেছেন। মরণ নিশ্চিত জেনেও যেমন জীবনের আবাহন! ‘দেশ আগে’—স্পন্দন থাকুক অম্লান। লক্ষ শহীদের দান মুক্ত স্বাধীন দেশের গর্বিত সন্তান!

জেনে এসেছি ১৯৯৮ সালে বিমানবন্দরে চাকরির সময় মুরগি মিলন থেকে। চট্রগ্রাম কাস্টম হাউসে ২০০৭-২০১০এও জেসি থাকাকালেও। তুফান বারবার এসেছে। ছদ্মবেশী মিত্র, কখনো আগন্তুক অহেতুক শত্রু হয়েছে। সত্যের বৃক্ষ উঁচু শিরে আজো দাঁড়িয়ে আছে।

অগত্যা শত্রুতায় পড়ে গেলাম! অপবাদ পেলাম। মৌনতায় দোষে-অদোষে অবিমিশ্র থাকলাম। শত্রুযোগে কিছু অন্দর-বন্দরের ‘আয় তোরা সহচরী’। সামাজিক যোগাযোগ ও সংবাদ মাধ্যমের বন্ধুরাও বুঝে না বুঝে ‘ভায়াগ্রাওয়ালা’কেই ঘি দিলেন।

প্রেরণা কখনো বিশ্বসেরা সাকিব আল হাসানের বল ও ব্যাট। দেশের প্রেমের যুদ্ধে ঈর্ষা, বৈরিতা, বিষোদগার চোরকারবারী কুপোকাত! পেশাদারিত্বের এমন নীতিই বেনাপোলের ধারাপাত।

আমরা অপেক্ষমান। কখন পাবো ডিজি ওষুধ প্রশাসনের চুড়ান্ত প্রতিবেদন। পরশু সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় আরাধ্য ইমেইল। ড. নাসিমা বানু Sildenafil Citrate বলে দিলেন! এ পণ্যের পাঁচটি রাসায়নিক পরীক্ষার তিনটিতে সিলডানাফিল সাইট্রেট—ভায়াগ্রা সনাক্ত।

অংশীজনরা বুঝতে পারছেনা বিসিএসআইআর কেন sodium starch glycolate বললেন! চালানটি সাহেব এ ঘোষণায়ই আমদানি করেছিলেন।

বাকী কাহিনী প্রেস রিলিজে আছে..... জীবনে চোরাকারবারীর সাথে আপোষ করিনি। জীবনতো এখন প্রায় শেষ! লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত এ দেশ। অসাধু, দেশ সমাজ ও জনস্বাস্থ্যের শত্রু নিপাত যাক! মাতৃভূমি চোরাকারবারী, মাদক পাচারকারী ও ভায়াগ্রা পাচারকারী অসাধু চক্রের তীর্থভূমি নাহোক।

জ্ঞাণী শত্রুও একরকমের আশীর্বাদ! একটা উদ্বুদ্ধ দলের মনোবল ক্ষুন্ন করা অভিশাপ। রাতদিনের সেবায় সম্পৃক্ত নিবেদিত দলটিতে বিষণ্ণ প্রভাব! চেকপোস্ট, কার্গো, হলরুম গতকাল থেকে আবার স্পন্দন কর্মযোগ.... ঐক্য, ধৈর্য্য, দেশপ্রেম ও সক্ষমতায় বেনাপোল টীম সাধুবাদ!

রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।” দশের শক্তি একের বল। চোরকারবারী একা ও দুর্বল! ওদের ক্ষমতা আস্ফালন সব বিফল। ধৈর্য্য ও ঐশ্বর্যময় উদ্বুদ্ধ সহযোগিতার জন্য কাস্টম হাউসে আমার সকল সহকর্মী বিশেষত এসি ও তদুর্ধ কর্মকর্তাগণ, সিএন্ডএফ এজেন্টস নেতৃবৃন্দ, বিজিবি, স্থলবন্দরসহ সকল অংশীজন ও বেনাপোলবাসীকে কৃতজ্ঞতা! 

জনাব, খোঁচা দিয়ে, আঙ্গুল উঁচিয়ে, ভয় দেখিয়ে লাভ নেই! পেশাদারদের রকমফের নেই! এভাবে পেশাদারিত্বের সাথে আমরা কাজ করে যেতে চাই। অসাধু ও দেশের শত্রুর বিরুদ্ধে লড়তে সবার সহযোগিতা চাই। ফেসবুকের মাধ্যমে এসব জানিয়েছেন কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরী।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এমএজেড/এএইচকে

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়