দুর্গোৎসবে শান্তি-সম্প্রীতি রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্ক র্যাব
ছবি: সংগৃহীত
শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সার্বিকভাবে সব ধরণের ঝুঁকি বিবেচনা করে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুর শহরের জাহাজ কম্পানি মোড়ের করুণাময়ী কালীবাড়ি মন্দির পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান।
তিনি জানান, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের বন্ধন সুসংহত করতে র্যাব মাঠে রয়েছে।
তার ভাষায়, দুর্গাপূজা এখন শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব নয়, এটি সার্বজনীন উৎসব, আর তার সার্বিক সাফল্য নিশ্চিত করতে কাজ করছে র্যাব।
র্যাব প্রধান জানান, রংপুর বিভাগে র্যাব-১৩ এর আওতায় মোট ৪,৬৭০টি পূজামণ্ডপ রয়েছে। এ ছাড়াও সারা দেশে প্রায় ৩৫ হাজার পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এসব মণ্ডপ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকবে। র্যাব ইতিমধ্যে গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল কার্যক্রম বাড়িয়েছে। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপে ডগ স্কোয়াড, বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এবং কমান্ডো টিম প্রস্তুত থাকবে।
তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে কিছু কাপুরুষ ও দুস্কৃতিকারী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টা করেছিল। এবার যেন কেউ সেই অশুভ চক্রের অংশ না হতে পারে, সে বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুত।
শহিদুর রহমান আরও জানান, ভার্চুয়াল জগতে গুজব, উসকানিমূলক তথ্য ও মিথ্যা প্রচারণা ঠেকাতে র্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম সার্বক্ষণিকভাবে অনলাইনে নজরদারি চালাচ্ছে।
তার ভাষায়, প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এ কারণে অনলাইনভিত্তিক অপপ্রচারকারীদেরও কঠোরভাবে দমন করা হবে।
আরও পড়ুন: পূজার সময় ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
রংপুর জেলা ও মহানগর পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এবার জেলায় মোট ৯১২টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে মহানগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে ১৫৪টি মণ্ডপ এবং জেলার আট উপজেলায় ৭৪১টি মণ্ডপ থাকবে। উপজেলা ভিত্তিক হিসাবে কোতোয়ালী থানায় ৯১টি, গঙ্গাচড়ায় ৯৬টি, তারাগঞ্জে ৬১টি, বদরগঞ্জে ১০৬টি, মিঠাপুকুরে ১৩৯টি, পীরগঞ্জে ৮৯টি, পীরগাছায় ৮৭টি এবং কাউনিয়ায় ৭২টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া বদরগঞ্জ পৌরসভায় ১০টি এবং পীরগঞ্জ পৌরসভায় ৭টি পূজামণ্ডপে পূজা হবে।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের প্রতিটি পূজা মণ্ডপ ও মন্দিরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। পূজামণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ রাখার ওপর জোর দেন তিনি। সীমান্তবর্তী এলাকায় বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও মাঠে থাকবে।
এ সময় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী, রংপুর জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক ডা. নিখিলেন্দ্র শংকর গুহ রায়সহ র্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রংপুর জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক ডা. নিখিলেন্দ্র শংকর গুহ রায় বলেন, উত্তর জনপদের সম্প্রীতির রংপুরে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব পালনে আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা পাচ্ছি। এখন পর্যন্ত সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। আশা করি, রংপুরবাসীর সহযোগিতায় নির্বিঘ্নে উৎসব উদযাপন করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সকল ধর্মাবলম্বীর সহযোগিতায় উৎসবটি সম্প্রীতির আবহে সম্পন্ন হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (অব.) মেজর জেনারেল এমডি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সম্প্রতি জানিয়েছেন, সারাদেশে ৩৩ হাজারের বেশি পূজামণ্ডপে এবারের দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণ করতে প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। ইতোমধ্যেই তিন স্তরে নিরাপত্তা পরিকল্পনা করা হয়েছে—পূজার আগে, চলাকালীন এবং বিসর্জন পরবর্তী সময়ে।
শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হবে ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীতে এবং শেষ হবে ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে। এর আগে মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষের সূচনা ও দেবীর আগমন উপলক্ষ্যে নানা আয়োজন ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং সেনাবাহিনীর সমন্বিত উদ্যোগে এবারের দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর ও সম্প্রীতির আবহে পালিত হবে—এমনটাই প্রত্যাশা হিন্দু সম্প্রদায়সহ দেশের সকল মানুষের।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








