News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৩:২২, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সাবেক ভূমিমন্ত্রীর সম্পদ ও অর্থপাচারের ২৩ বস্তা নথি উদ্ধার

সাবেক ভূমিমন্ত্রীর সম্পদ ও অর্থপাচারের ২৩ বস্তা নথি উদ্ধার

ছবি: সংগৃহীত

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের অবৈধ সম্পদ ও অর্থপাচারের তথ্য সংবলিত ২৩ বস্তা নথি উদ্ধার করেছে। নথিগুলোতে তার বিদেশে সম্পদ অর্জন, বাড়ি মালিকানা, ভাড়া ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচসহ অর্থপাচারের সুস্পষ্ট আলামত পাওয়া গেছে।

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাত ৩টা থেকে শুরু হওয়া অনুসন্ধানের পর শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৪টা ১৫ মিনিটে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নের সিকদার বাড়ি থেকে অভিযান চালানো হয়। 

দুদকের ঢাকা প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মশিউর রহমান ও উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। 

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলম এবং কর্ণফুলী থানা পুলিশের একটি টিমও অভিযানে অংশগ্রহণ করে।

দুদক সূত্রে জানা যায়, অভিযানের আগে নথিগুলো সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। ইউসিবিএলের সাবেক চেয়ারম্যান রুখমিলা জামানের ব্যক্তিগত গাড়ি চালক মো. ইলিয়াস তালুকদার প্রথমে আরামিট গ্রুপের শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে নথিগুলো নিয়ে নিজের বাড়িতে আনে। পরে ১৮ সেপ্টেম্বর এগুলো ওসমান তালুকদারের বাড়িতে স্থানান্তর করা হয়। দুদক সেখানে তালা ভেঙে ২৩ বস্তা নথি উদ্ধার করে।

উল্লেখ্য, নথিতে বিদেশে সম্পদ ক্রয়ের দলিল, বিল পরিশোধ, বাড়িভাড়া আদায় এবং আদালতের আদেশ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে। এগুলো পর্যায়ক্রমে যাচাই-বাছাই করে কমিশনে একটি সুনির্দিষ্ট প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে।

এর আগে, ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে দুদকের একটি টিম আরামিট পিএলসি’র এজিএম উৎপল পাল এবং আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়ামের এজিএম আব্দুল আজিজকে গ্রেফতার করে। তারা ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মূল হোতা হিসেবে কাজ করতেন। আদালত তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

উৎপল পাল দেশে থেকে দুবাই হয়ে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে অর্থপাচারের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করতেন। 

আরও পড়ুন: সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের এজেন্ট আজিজ ও উৎপল গ্রেপ্তার

অন্যদিকে, আব্দুল আজিজ জাবেদের সম্পত্তি কেনাবেচা, ভাড়া আদায় এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন। দুদক তাদের কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ ও দুটি মোবাইল ফোনও জব্দ করেছে।

২৪ জুলাই দুদক ভূমিমন্ত্রী জাবেদ, তার স্ত্রী রুখমিলা জামান, ভাই আসিফুজ্জামান চৌধুরী, বোন রোকসানা জামানসহ ইউসিবিএল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালক বশির আহমেদকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। 

অভিযোগে বলা হয়, আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে পাঁচটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান- ভিশন ট্রেডিং, আলফা ট্রেডার্স, ক্ল্যাসিক ট্রেডিং, মডেল ট্রেডিং ও ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং—খোলা হয়।

এরপর ইউসিবিএল ব্যাংকের চট্টগ্রাম বন্দর শাখায় এসব প্রতিষ্ঠানের নামে হিসাব খুলে, গম, ছোলা, হলুদ ও মটর আমদানির নামে ২৫ কোটি টাকার টাইম লোন অনুমোদন করা হয়। ব্যাংকের নিজস্ব ‘ক্রেডিট কমিটি’র ১৭টি নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ উপেক্ষা করে ২০২০ সালের ৮ মার্চ পরিচালনা পর্ষদ ঋণ অনুমোদন দেয়। পরে সেই টাকা চারটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে স্থানান্তর ও নগদ উত্তোলনের মাধ্যমে পাচার করা হয়।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যাংক পরিচালক, ঋণ আবেদনকারী এবং অনুমোদনকারী সবাই একে অপরের আত্মীয় বা ঘনিষ্ঠ হওয়ায় সমন্বিত চক্রান্তের মাধ্যমে ঋণ নেওয়া ও অর্থ পাচার করা সম্ভব হয়। এরপর নগদ উত্তোলনের টাকা আরামিট গ্রুপের হিসাবের মধ্যে পুনরায় জমা দেওয়া হয়।

মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪০৯, ৪২০, ৪৭১ ও ১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় দণ্ডনীয় অপরাধ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী চট্টগ্রাম-১৩ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভূমি প্রতিমন্ত্রী ও ২০১৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

গত বছরের ৭ অক্টোবর আদালত সাইফুজ্জামান ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়। আদালতের অভিযোগ অনুসারে, তারা দেশ থেকে অর্থপাচার করে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল সম্পত্তি অর্জন করেছেন।

দুদকের উপ-পরিচালক মশিউর রহমান বলেন, আমরা সাবেক মন্ত্রীর সহযোগীদের রিমান্ডে নেওয়ার মাধ্যমে জানতে পারি, গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথি সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে ২৩ বস্তা নথি উদ্ধার করেছি। এগুলো যাচাই-বাছাইয়ের পর বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়