বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র-যৌথ সামরিক মহড়া, ভারত-চীনের সতর্ক দৃষ্টি

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান যৌথ সামরিক মহড়াকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত তৎপরতা ও নজরদারি বেড়েছে। গত রবিবার চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশের বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ঘাঁটি জহুরুল হকে যুক্তরাষ্ট্রের সি-১৩০জে সুপার হারকিউলিস বিমান অবতরণের পর থেকেই এই মহড়া নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ভারত ও চীন ঘটনাটিকে কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ফার্স্টপোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক মহড়া ওয়াশিংটনের দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের স্পষ্ট বার্তা বহন করছে। চট্টগ্রামের কৌশলগত অবস্থান, যা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের খুব কাছাকাছি, এই অঞ্চলে মার্কিন নজরদারি ও কার্যক্রম পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধ এবং আঞ্চলিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে এই যৌথ মহড়া যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়ায় উপস্থিতি বৃদ্ধির কৌশলের অংশ। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও পরিবর্তনের পর দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সম্পৃক্ততা বাড়তে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ‘টাইগার লাইটনিং’ এবং ‘টাইগার শার্ক’ নামের সামরিক মহড়ায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী যৌথভাবে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান ও জঙ্গল অভিযানে অংশ নেয়।
সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, গত বছরের জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পতিত হয়। ক্ষমতায় আসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, প্রধান হিসেবে শপথ নেন নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউনূসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে দেশটিতে মার্কিন সামরিক নড়াচড়া বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আরও পড়ুন: লিবিয়া থেকে প্রত্যাবাসিত ১৭৬ বাংলাদেশি
চট্টগ্রামের কৌশলগত অবস্থান এবং যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অংশগ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরে ফার্স্টপোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কাছাকাছি। এ কারণে এটি মার্কিন বাহিনীর কার্যক্রম পরিচালনা এবং ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে নজরদারি প্রতিষ্ঠার সুবিধাজনক এলাকা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষত মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন উভয়ই সেখানে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। যদিও বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্তে মার্কিন সামরিক সহায়তার একটি করিডোর তৈরি করার পরিকল্পনা ছিল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এতে সায় দেয়নি।
এছাড়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে চীনের প্রভাবও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে তিস্তা নদী প্রকল্পে চীনের অংশগ্রহণ এবং জে-১০ যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা চীনের কৌশলগত অগ্রগতির প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অংশগ্রহণ এবং চীনের অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা বিনিয়োগ দুটোই ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের সামনে নতুন কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হিসেবে এসেছে।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বিমান বাহিনীর অংশগ্রহণে সাত দিনব্যাপী এই মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, গত রোববার এয়ার ভাইস মার্শাল হায়দার আব্দুল্লাহ চট্টগ্রামের জহুরুল হক ঘাঁটিতে মহড়ার উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক এয়ার ফোর্সের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই যৌথ মহড়া দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ভারসাম্যকে আরও জটিল করে তুলতে পারে এবং আঞ্চলিক রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। একই সঙ্গে এটি ভারতের জন্য একটি কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের শক্তি সমীকরণ বাংলাদেশের ভূ-রাজনীতিকে সরাসরি প্রভাবিত করছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি