এনআইডি লক, ভোট দিতে পারবেন না শেখ হাসিনা ও পরিবার
ছবি: সংগৃহীত
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যরা।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব আখতার আহমেদ।
গত এপ্রিলে নির্বাচন কমিশনের অধীন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ১০ সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ‘লক’ করার নির্দেশনা দিয়েছিল। এতে প্রবাসে বসে ভোট দিতে তাদের কোনো সুযোগ থাকবে না।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, যাদের এনআইডি লক আছে, তারা কেউই প্রবাসে বসে ভোট দিতে পারবেন না।
তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, সংসদ নির্বাচনে ইন-কান্ট্রি এবং আউট-অফ-কান্ট্রি ভোট ব্যবস্থা থাকবে। যারা প্রবাসে আছেন, তারা অনলাইনে নিবন্ধন করবেন। এ জন্য সিস্টেম ডেভেলপ করা হচ্ছে।
প্রশ্ন করা হলে, শেখ হাসিনা ভোট দিতে পারবেন কি না, ইসি সচিব বলেন, ওনার তো এনআইডি লক আছে। যাদের এনআইডি লক আছে তারা কেউই ভোট দিতে পারবেন না।
তিনি আরও স্পষ্ট করেছেন, মামলার কারণে বা অন্য কোনো কারণে যদি কেউ বিদেশে অবস্থান করে, তবে তাদের ভোট দিতে কোনো বাধা নেই। তবে তাদের এনআইডি আনলক অবস্থায় থাকতে হবে।
ইসি সচিব জানান, প্রবাসে বসে ভোট দিতে হলে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে এনআইডি নম্বর দিয়ে। পাসপোর্ট নয়, এনআইডি বাধ্যতামূলক। যার এনআইডি লক থাকবে, তিনি কীভাবে অনলাইনে নিবন্ধন করবেন? তিনি তো পারবেন না। যারা এনআইডি দিয়ে নিবন্ধন করবেন, তারাই কেবল এই সুযোগ পাবেন।
আরও পড়ুন: “ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে উৎসবমুখর নির্বাচন”
শেখ পরিবারের এনআইডি লক হওয়া সদস্যরা হলেন শেখ হাসিনা, সজীব আহমেদ ওয়াজেদ, সায়মা ওয়াজেদ, রেহানা সিদ্দিক (শেখ রেহানা), টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক, শাহিন সিদ্দিক, বুশরা সিদ্দিক, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, তারিক আহমেদ সিদ্দিক।
ইসি সচিব উল্লেখ করেছেন, যাদের এনআইডি লক করা আছে তারা প্রবাসে বসে ভোটের জন্য অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারবেন না। এনআইডি লক না থাকলে, মামলার কারণে বা অন্য কোনো কারণে বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিরা ভোট দিতে পারবেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের মন্ত্রী ও এমপিরা। একই সঙ্গে তার দল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীও বিভিন্ন দেশে চলে যান। এছাড়া, আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যক্রমের ওপর সরকার ইতোমধ্যেই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
শেখ পরিবারসহ প্রবাসে থাকা যেসব ব্যক্তির এনআইডি লক করা হয়েছে, তারা ভোটাধিকারের জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন না। নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা অনুযায়ী, যারা বিদেশে অবস্থান করছেন তাদের ভোটাধিকার সীমিত হবে, যদি তাদের এনআইডি লক থাকে।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন। তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলছে। এছাড়া, শেখ হাসিনা পরিবারের সদস্যরা বিদেশে অবস্থানরত অবস্থায় জুলাই অভ্যুত্থানের সময় বিভিন্ন হত্যার ঘটনায় মামলার আসামি হয়েছেন। ‘অনিয়ম ও দুর্নীতির’ অভিযোগেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গেল ১১ মার্চ আদালত শেখ হাসিনা, তার পরিবার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং আওয়ামী লীগের নামে ১২৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেয়। এছাড়া, নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন প্রস্তাব করেছে। তবে আদালত ঘোষিত ফেরারি আসামিদের ভোটে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখেনি।
ইসি কর্মকর্তারা বলেন, এনআইডি স্থগিত বা লক হলে কার্ডটি ব্যবহারযোগ্য থাকে না। এবার প্রথমবারের মতো আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালটে প্রবাসীদের ভোটের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রবাসীরা ‘পোস্টাল ব্যালট বিডি’ নামের নিবন্ধন অ্যাপে নিবন্ধন করবেন। এরপর নির্ধারিত পদ্ধতিতে ভোট পেপার তাদের কাছে বিশেষ খামে পাঠানো হবে। ভোট দেওয়ার পর তা দেশে ফেরত এনে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দিতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপে বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর প্রতীক বরাদ্দের সময় নির্ধারিত হবে কখন এই ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। ভোটের এক সপ্তাহ আগে তা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পৌঁছানো হবে। আইন পাসের পর অক্টোবর-নভেম্বরে প্রবাসী ভোটিং নিয়ে ব্যাপক প্রচার কর্মসূচি নেওয়া হবে। এই পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থার মাধ্যমে ফেব্রুয়ারির ভোটে প্রথমবার প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভোট দিতে পারবেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








