News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২১:৫৭, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নেপালের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে ঢাকা

নেপালের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে ঢাকা

ফাইল ছবি

নেপালে চলমান বিক্ষোভ ও সহিংসতায় অন্তত ১৯ জনের প্রাণহানির ঘটনার মধ্যে পদত্যাগ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি। 

ঢাকায় বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে, তারা প্রতিবেশী নেপালের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। একই সঙ্গে নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছে এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছে।

মঙ্গলবার (০৯ সেপ্টেম্বর) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশ আশা করে নেপালের সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করবে এবং শান্তিপূর্ণ ও গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দীর্ঘদিনের বন্ধু ও প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে নেপালের জনগণ পুনরায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।

বিক্ষোভের সূচনা হয় সরকারের হঠাৎ ২৬টি জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম—যার মধ্যে ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, এক্স ও ইউটিউব ছিল—বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর। নিবন্ধন সংক্রান্ত শর্ত পূরণ না করায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ সৃষ্টি করে। “জেন জি প্রটেস্টস” নামে পরিচিত এই আন্দোলনে তরুণরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণের প্রতিবাদে রাস্তায় নামে।

সংঘর্ষে অন্তত ১৯ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে কারফিউ উপেক্ষা করে রাস্তায় নামে এবং পার্লামেন্ট, সুপ্রিম কোর্ট, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বাসভবন, এমনকি প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনসহ একাধিক স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়।

তীব্র সহিংসতার মধ্যে সরকার দ্রুত সামাজিক মাধ্যম নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। 

আরও পড়ুন: নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের জন্য জরুরি বার্তা

প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি নিহতদের পরিবারের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেন, ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদানের ঘোষণা দেন।

তবে সহিংসতা থামাতে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি অবশেষে মঙ্গলবার পদত্যাগপত্র জমা দেন। 

অলি এক বিবৃতিতে বলেন, জাতীয় সংকটের এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি শান্ত করার জন্যই আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখকও “নৈতিক দায় স্বীকার করে” পদত্যাগ করেন। একাধিক মন্ত্রীর বাসভবনেও হামলা চালানো হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা ও তার স্ত্রীও বিক্ষোভকারীদের হামলার শিকার হন।

প্রতিবেশী ভারতও নেপালের সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। 

নয়াদিল্লি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও প্রতিবেশী হিসেবে আমরা আশা করি, নেপালের সব পক্ষ সংযম প্রদর্শন করবেন এবং শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান করবেন।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নেপালে অবস্থানরত ভারতীয় নাগরিকদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের পানিটাঙ্কি এলাকায় উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী সীমান্তে অতিরিক্ত টহল মোতায়েন করেছে এবং কড়া তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

এদিকে, ভারতের এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগো কাঠমান্ডুগামী একাধিক ফ্লাইট বাতিল করেছে। কিছু উড্ডয়ন বাতাসে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নেপালের এই আন্দোলন দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক তরুণ-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়ার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আন্দোলনের মতোই নেপালে দুর্নীতি, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ ও অস্বচ্ছ নীতি-নির্ধারণের বিরুদ্ধে যুবসমাজের “হঠাৎ জেগে ওঠা” এর কেন্দ্রে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়