News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৮:০৫, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

তালেবান শাসনে উদ্ধারকাজে উপেক্ষিত ভূমিকম্পে আহত নারীরা

তালেবান শাসনে উদ্ধারকাজে উপেক্ষিত ভূমিকম্পে আহত নারীরা

ছবি: সংগৃহীত

আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত সাড়ে তিন হাজার মানুষ। 

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, ভূমিকম্প আঘাত হানার পর ৩৬ ঘণ্টারও বেশি সময় কেটে যাওয়ার পর প্রথম উদ্ধারকারী দল দুর্গত এলাকায় পৌঁছায়। তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠে এসেছে— এই উদ্ধার কার্যক্রমে নারী ও কিশোরীরা প্রায় উপেক্ষিত থেকে গেছে।

কুনার প্রদেশের আন্দারলুকাক গ্রামের ১৯ বছর বয়সী আয়েশা জানান, আহত পুরুষ ও শিশুদের দ্রুত ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে আনা হচ্ছিল এবং তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু তিনি ও অন্য আহত নারীদের এক কোণে ফেলে রাখা হয়।

আয়েশা বলেন, তারা আমাদের এক পাশে জড়ো করে ভুলে গেল। কেউ আমাদের কাছে আসেনি, আমাদের কী দরকার তা জিজ্ঞেসও করেনি।

তাহজিবুল্লাহ মুহাজিব নামের এক স্বেচ্ছাসেবক জানান, মাজার দারা এলাকায় পুরুষ উদ্ধারকারীরা নারীদের বের করতে দ্বিধায় ভুগছিলেন। এমনকি মৃত নারীদেরও কাপড় ধরে টেনে আনা হচ্ছিল, যাতে সরাসরি শরীরে হাত না পড়ে। 

তার ভাষায়, মনে হচ্ছিল নারীরা যেন অদৃশ্য। পুরুষ ও শিশুদের আগে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, নারীরা আলাদা বসে অপেক্ষা করছিলেন।

আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে আবারও ভূমিকম্প

তালেবান সরকারের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী, পরিবারের বাইরে কোনো পুরুষ ও নারীর মধ্যে শারীরিক স্পর্শ নিষিদ্ধ। এই নিয়ম ভাঙলে কঠোর শাস্তি হতে পারে। ফলে জরুরি পরিস্থিতিতেও উদ্ধারকাজে নারীসহায়তা কার্যত উপেক্ষিত থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তালেবান শাসনে নারীরা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, চাকরি— জনজীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রেই বঞ্চিত। বিশেষ করে চিকিৎসা শিক্ষায় নারীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নারী চিকিৎসকের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। এর ফলে স্বাস্থ্যসেবা থেকেও নারীরা সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হচ্ছেন।

জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থার আফগানিস্তান প্রতিনিধি সুসান ফার্গুসন সতর্ক করে বলেছেন, নারী ও মেয়েরাই আবারও এই দুর্যোগের প্রধান শিকার হবে। তাদের প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে ত্রাণ ও পুনর্গঠন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, রবিবার আঘাত হানা ৬ ও ৫.৫ মাত্রার দুটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ২ হাজার ২০০ জন নিহত ও ৩ হাজার ৫০০ জন আহত হয়েছেন। তবে মানবিক সহায়তার অভাবে বিশেষ করে নারী ও শিশুদের পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছে ত্রাণ সংস্থাগুলো।

এমন এক দুর্যোগময় সময়ে উদ্ধারকাজ ও চিকিৎসাসেবা থেকে নারীদের আলাদা করে রাখার ঘটনা আফগানিস্তানের নারী অধিকার সংকটকে নতুন করে সামনে এনেছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়