দেশজুড়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউন

ছবি: সংগৃহীত
দেশের সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) পূর্ণ শাটডাউন শুরু হয়েছে। ‘প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলন’-এর ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বুধবার গভীর রাতে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। ফলে আজ কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
শিক্ষার্থীরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই শাটডাউন চলবে।
বুধবার (২৭ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে শাহবাগে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের সামনে কর্মসূচি ঘোষণা করে।
সাধারণ সম্পাদক সাকিবুল হক লিপু বলেন, আমাদের তিন দফা দাবির একটিও পূরণ হয়নি। অথচ যারা নীতিনির্ধারক হিসেবে বসে আছেন তারা আন্দোলনের বিষয়টি সম্পর্কে উদাসীন। তাই বাধ্য হয়ে সারাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি আরও জানান, আজ বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হবে। সেখানে আন্দোলনের পরবর্তী ধাপ ঘোষণা করা হবে।
কর্মসূচির প্রেক্ষাপট গড়ে ওঠে বুধবার দুপুরে। বুয়েটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার উদ্দেশে লং মার্চে বের হলে শাহবাগ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে শাহবাগ থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল পর্যন্ত ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ হয়। এতে অন্তত পাঁচজন শিক্ষার্থী ও একজন সাংবাদিক আহত হন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে দুইজনকে ভর্তি করতে হয় এবং বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তারা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করছিলেন, কিন্তু পুলিশ বিনা উসকানিতে জলকামান ও টিয়ারশেল ব্যবহার করেছে।
অন্যদিকে পুলিশ বলছে, শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে জনদুর্ভোগ তৈরি করছিলেন, তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
রাতেই পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে হাজির হন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে বলেন, শাহবাগে যা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। পুলিশের কিছু পদক্ষেপ অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল।
তিনি আশ্বাস দেন যে, বৃহস্পতিবারের মধ্যেই ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হবে। তার এই বক্তব্যের পর শিক্ষার্থীরা শাহবাগের অবরোধ তুলে নেন এবং যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এদিন সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন রেলপথ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এবং পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বৈঠক শেষে ফাওজুল কবির খান বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি চাকরি ও নিয়োগ প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন আছে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা হবে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য আমাদের দরজা খোলা। কিন্তু দাবিদাওয়া মানে এই নয় যে, প্রতিবার শাহবাগ অবরোধ বা যমুনার দিকে লং মার্চ হবে। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চাই।
আরও পড়ুন: প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের নতুন আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা
শিক্ষার্থীরা যে তিনটি মূল দাবি উত্থাপন করেছেন তা হলো—
১. শুধুমাত্র বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারীদের ‘প্রকৌশলী’ উপাধি ব্যবহার করার অধিকার নিশ্চিত করা।
২. নবম গ্রেডে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের অবৈধ প্রমোশন বন্ধ করা।
৩. দশম গ্রেডের সরকারি চাকরিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের শতভাগ কোটা বাতিল করে তা খোলা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পূরণ করা।
তবে আন্দোলন চলাকালে নতুন করে পাঁচ দফা অতিরিক্ত দাবি যোগ হয়। এর মধ্যে রয়েছে—
- পুলিশের হামলার ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা,
- বিদ্যমান কমিটি ভেঙে শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী ও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি গঠন,
- তিন দফা দাবি নির্বাহী আদেশে গ্রহণ,
- আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যয় সরকার বহন,
- হামলার ঘটনায় দায়ীদের শাস্তি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার অপসারণ।
বুধবারের সংঘর্ষ ও অবরোধের কারণে দীর্ঘ সময় শাহবাগসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ ছিল। অফিসগামী মানুষ ও শিক্ষার্থীদের প্রচণ্ড ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে প্রায় রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। রাজধানীর অন্যান্য এলাকাতেও যানজটের প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, তারা জনদুর্ভোগ এড়াতে এখন থেকে শাহবাগ অবরোধের মতো কর্মসূচি থেকে সরে আসবেন। তবে শাটডাউন চলতে থাকবে এবং আজ বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
আন্দোলনের নেতারা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি