ত্রিমুখী নেতৃত্বে টাইগাররা: ওয়ানডেতে মিরাজের অভিষেক

ফাইল ছবি
বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন এক অধ্যায় সূচিত হলো। প্রথমবারের মতো তিন ফরম্যাটে তিনজন আলাদা অধিনায়কের নেতৃত্বে মাঠে নামবে জাতীয় দল। টেস্টে নাজমুল হোসেন শান্ত, টি-টোয়েন্টিতে লিটন কুমার দাস এবং সর্বশেষ ওয়ানডে দলে অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহেদী হাসান মিরাজকে এক বছরের জন্য ওয়ানডে দলের অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমূল আবেদীন জানান, ব্যাট ও বল হাতে মিরাজের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স, তার লড়াকু মনোভাব, দলকে অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা এবং মাঠের ভেতরে-বাইরের নেতৃত্বগুণ তাকে এই সময়ের জন্য আদর্শ অধিনায়ক করে তুলেছে।
নাজমুল হোসেন শান্ত নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোয় এই পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে।
এর আগে শান্ত জানিয়ে দেন, তিনি আপাতত ওয়ানডের নেতৃত্বে আগ্রহী নন, বরং টেস্ট ক্রিকেটেই মনোযোগ দিতে চান।
বিসিবি সূত্র জানিয়েছে, মিরাজের অধিনায়কত্বের মেয়াদ পরবর্তীতে পারফরম্যান্স ও নেতৃত্ব দক্ষতার ভিত্তিতে বাড়ানো হতে পারে।
এর আগে ইনজুরির কারণে শান্ত না থাকায় মিরাজ ২০২৪ সালের নভেম্বরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শারজায় একটি ওয়ানডে এবং পরবর্তীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে আরও তিন ওয়ানডেতে অধিনায়কত্ব করেছিলেন। তবে সেসব ছিল আপদকালীন দায়িত্ব। এবারই তিনি স্থায়ীভাবে এক বছরের জন্য ওয়ানডে দলের পূর্ণকালীন অধিনায়ক হলেন।
এ পর্যন্ত ৪টি ওয়ানডে ম্যাচে অধিনায়কত্ব করে কোনো জয় না পেলেও বোর্ড তার নেতৃত্বগুণ ও দলে ইতিবাচক প্রভাবের ভিত্তিতে স্থায়ী দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মিরাজ এখন বাংলাদেশের ১৭তম ওয়ানডে অধিনায়ক।
আরও পড়ুন: দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট দলে ফিরলেন ইবাদত
মিরাজের নেতৃত্বে ওয়ানডে দলের প্রথম সিরিজ হবে আগামী জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কায়। এই তিন ম্যাচের সিরিজ অনুষ্ঠিত হবে যথাক্রমে ২, ৫ ও ৮ জুলাই। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর এটিই হবে বাংলাদেশ দলের প্রথম ওয়ানডে সিরিজ। “হোক না, হলে তো ভালোই,” শ্রীলঙ্কা সফরকে সামনে রেখে এমন আত্মবিশ্বাসই দেখাচ্ছেন মিরাজ।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের পথচলা শুরু হয়েছিল ১৯৭৭ সালের ৭ জানুয়ারি। সেদিন ঢাকার রামনার জাতীয় স্টেডিয়ামে (বর্তমানে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম) ইংল্যান্ডের এমসিসির বিপক্ষে তিন দিনের একটি ‘আন-অফিসিয়াল’ টেস্ট ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। শামীম কবিরের নেতৃত্বে সেই ম্যাচে প্রথমবার ‘বাংলাদেশ’ নামে কোনো দল আন্তর্জাতিক প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয়েছিল।
এই ঐতিহাসিক ম্যাচ এবং এর ফলাফলের ভিত্তিতে একই বছরের জুনে বাংলাদেশ আইসিসির সহযোগী সদস্যপদ লাভ করে। এরপর ধাপে ধাপে উঠে এসেছে টেস্ট ও ওয়ানডে স্ট্যাটাসে।
প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ বাংলাদেশ খেলে ১৯৮৬ সালে এশিয়া কাপে, গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর নেতৃত্বে। এরপর দেশের ক্রিকেটে এসেছে অনেক স্মরণীয় অধিনায়ক – মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুশফিক – যারা দলের ভিত গড়েছেন।
সর্বাধিক ওয়ানডেতে অধিনায়কত্ব করেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা – ৮৮ ম্যাচে ৬০টি জয়। তার পর আছেন হাবিবুল বাশার (৬৯ ম্যাচ), সাকিব আল হাসান (৬২), এবং তামিম ইকবাল (৩৭)।
২০২৫ সালের বিসিবির এক সভায় তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়ক রাখার প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। সভাপতি আমিনুল ইসলামের অধীনে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়। এতে করে প্রত্যেক অধিনায়ক নিজ নিজ ফরম্যাটে বিশেষায়িত পরিকল্পনায় দল পরিচালনা করতে পারবেন বলে মনে করছে বোর্ড।
মেহেদী হাসান মিরাজের অধিনায়কত্বের যাত্রা কেবলই শুরু। শ্রীলঙ্কা সফর তার জন্য হবে এক বড় চ্যালেঞ্জ ও নিজেকে প্রমাণের মঞ্চ। বাংলাদেশ ক্রিকেট এবার নতুন কাঠামো ও নেতৃত্বগুণে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশায়, যেখানে প্রত্যেক ফরম্যাটেই গড়ে উঠবে স্বতন্ত্র ও শক্তিশালী নেতৃত্ব।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি