লক্ষ্য দর্শক নয়, জিততে হবে: জামাল

ছবি: সংগৃহীত
প্রায় সাড়ে চার বছর পর আন্তর্জাতিক ফুটবলের উন্মাদনায় কাঁপছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডে মঙ্গলবার (১০ জুন) বাংলাদেশ মুখোমুখি হচ্ছে সিঙ্গাপুরের। ভারতের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্রয়ের পর এই ম্যাচে জয় তুলে নিতে চায় লাল-সবুজরা। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া সংবাদ সম্মেলনে জানালেন, জয় ছাড়া কিছু ভাবছেন না তিনি ও তার দল।
সোমবার (৯ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে কোচ হাভিয়ের কাবরেরার সঙ্গে ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন জামাল।
সেখানে তিনি জানান, গ্যালারিতে ১০ জন হোক বা ২০ হাজার, মাঠের দায়িত্বই আসল, চাপ আমরা অনুভব করি, তবে সেটা মাথায় নিই না। আমাদের কাজ পারফর্ম করা। কতজন দর্শক খেলাটা দেখছেন সেটা নয়, দিন শেষে দেশের জন্য তিন পয়েন্ট তুলে নেওয়াই গুরুত্বপূর্ণ।
জামাল আরও বলেন, আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব ম্যাচে গোল করতে, তবে গোল করার পাশাপাশি ক্লিনশিট রাখাটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আপনি ১-০ তে জিতুন আর ৩-০, তিন পয়েন্টই আসল।
সিঙ্গাপুর তাদের সর্বশেষ প্রস্তুতি ম্যাচে মালদ্বীপকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে। দুটি গোলই এসেছে সেট পিস থেকে।
জামাল জানিয়েছেন, এই বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ দলে আলাদা প্রস্তুতি হয়েছে, সিঙ্গাপুর বল দখলে, বিল্ডআপ এবং সেটপিসে বেশ শক্তিশালী। আমাদের বাধা সৃষ্টি করতে হবে তাদের স্বাভাবিক খেলায়।
সিঙ্গাপুরের শক্তি মাথায় রেখে বাংলাদেশও তাদের রক্ষণ ও দ্রুত কাউন্টার অ্যাটাকের দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। ভুটানের বিপক্ষে ২-০ গোলের প্রস্তুতি জয়ে যে আত্মবিশ্বাস পেয়েছে দল, তা সিঙ্গাপুরের বিপক্ষেও কাজে লাগাতে চায় স্বাগতিকরা।
যদিও সংবাদ সম্মেলনে জামাল উপস্থিত ছিলেন অধিনায়কের ভূমিকায়, তবুও মাঠে তাকে দেখা যাবে কি না— সেটা এখনো নিশ্চিত নয়। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে তিনি খেলেননি, এবং সে অভিজ্ঞতা তার কাছে কষ্টকর বলেই মনে হয়েছে।
জামাল বলেন, আমি একজন ফুটবলার, সব সময়ই খেলতে চাই। ১০ মিনিট হোক বা ৬০ মিনিট, যতটুকু সুযোগ পাই ততটুকুই সেরাটা দিতে চাই। খেলতে না পারাটা যন্ত্রণাদায়ক, কিন্তু দল আগে। যারা খেলবে, তাদের শুভকামনা জানাই এবং উৎসাহ দেই।
আরও পড়ুন: স্পেনকে হারিয়ে নেশন্স লিগ চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল
প্রায় ৫৫ মাস পর ঢাকার মাটিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক ম্যাচ, আর তা নিয়েই তৈরি হয়েছে বিরল উত্তেজনা। টিকিটের জন্য হাহাকার, অনলাইনে মুহূর্তেই বিক্রি হয়ে যাওয়া ১৮ হাজার ৩০০ টিকিট, এবং শহরজুড়ে বাড়তে থাকা উৎসাহ—সব মিলে ফুটবলপ্রীতির চূড়ান্ত রূপ ফুটে উঠেছে।
যারা স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে পাচ্ছেন না, তাদের জন্য বিভাগীয় শহরগুলোতে জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলা দেখানোর ব্যবস্থা নিয়েছে বাফুফে। মাঠে দর্শকদের এমন উপস্থিতি দীর্ঘদিন পর।
জামালের ভাষায়, মানুষের এই আগ্রহ আমাদের অনুপ্রাণিত করে, তবে ফোকাস সবসময় ম্যাচের দিকে রাখতে হবে।
বাছাইয়ের ‘সি’ গ্রুপে ভারতের বিপক্ষে ড্র করে একটি পয়েন্ট অর্জন করেছে বাংলাদেশ। সিঙ্গাপুরেরও সমান পয়েন্ট। ফলে এই ম্যাচটি গ্রুপের জন্য টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়াতে পারে।
জামাল বলেন, আমাদের এখন প্রত্যাশা অনেক বেশি, এবং আমরা সেটা জানি। দেশের মানুষের, সমর্থকদের, এমনকি আমাদের পরিবারের কাছেও নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ কালকের ম্যাচ।
প্রায় এক দশক আগে ঢাকায় সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে খেলে জয়ের আশা জাগিয়েও পিছিয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। এবার সেই ভুল না করার প্রত্যয় জামালের কণ্ঠে স্পষ্ট।
তিনি বলেন, আমরা দেশের জন্য খেলি, আমাদের দায়িত্ব দেশের হয়ে জেতা। চাপ থাকবেই, তবে সেই চাপকে ইতিবাচকভাবে নিয়ে মাঠে ফল আনতে হবে।
এই ম্যাচ শুধু আরেকটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ নয়; এটা যেন জাতীয় ফুটবলের হারানো উত্তেজনা ফিরিয়ে আনার এক বড় উপলক্ষ। অধিনায়ক জামালের আত্মবিশ্বাস, দলের প্রস্তুতি এবং দেশের মানুষের অগাধ ভালোবাসা মিলিয়ে সিঙ্গাপুর ম্যাচে জয় পেতে আশাবাদী বাংলাদেশ। এখন অপেক্ষা—মাঠে কী ঘটে, সেটাই বলে দেবে বাছাইয়ের ভবিষ্যৎ পথচলার দিকনির্দেশনা।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি