News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৬:৩১, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আপডেট: ১৯:৫৩, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে নেপালে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, নিহত ১৯

সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে নেপালে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, নিহত ১৯

ছবি: সংগৃহীত

নেপালে সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে শুরু হওয়া আন্দোলন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। রাজধানী কাঠমান্ডুতে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ তরুণ-তরুণী সংসদ ভবনে ঢুকে পড়লে ব্যাপক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। 

এতে অন্তত ১৯ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে এবং রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জারি করা হয়েছে কারফিউ। 

সোমবার (০৮ সেপ্টেম্বর) সকালের দিকে রাজধানী কাঠমান্ডুর নিউ বানেশ্বর এলাকায় প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয়। 

বিক্ষোভকারীরা পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে। পুলিশ জলকামান ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে, আর বিক্ষোভকারীরা ডালপালা ও পানির বোতল ছুঁড়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পরে তারা সরাসরি সংসদ ভবনের প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে।

সংঘর্ষের পর দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি করে প্রশাসন। প্রথমে সীমিত এলাকায় কারফিউ জারি করা হলেও পরে তার পরিধি বাড়ানো হয়।

কাঠমান্ডুর প্রধান জেলা কর্মকর্তা ছাবিলাল রিজাল স্থানীয় প্রশাসন আইন-এর ৬ ধারা অনুযায়ী দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করেন।

এছাড়া প্রেসিডেন্টের বাসভবন শীতল নিবাস, মহারাজগঞ্জ, লাইনচৌরে উপ-রাষ্ট্রপতির বাসভবন, সিংহ দরবারের চারদিক, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন বালুওয়াটারসহ আশপাশের সংবেদনশীল এলাকাও কারফিউর আওতায় আনা হয়েছে। এই এলাকায় চলাফেরা, জমায়েত, বিক্ষোভ কিংবা অবরোধ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৮৭

৪ সেপ্টেম্বর থেকে নেপালে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব ও স্ন্যাপচ্যাটসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে টিকটক চালু রয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেই তরুণরা রাস্তায় নেমেছে।

আন্দোলনকারীরা এই আন্দোলনের নাম দিয়েছেন ‘জেন-জি রেভলিউশন’। তাদের দাবি, সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত জনগণের কণ্ঠরোধ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণের সমান।

নেপালের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানায়, সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধিত না হওয়ায় প্ল্যাটফর্মগুলো বন্ধ করা হয়েছে। সরকারের দাবি, ভুয়া আইডির মাধ্যমে ঘৃণা ও গুজব ছড়ানো, সাইবার অপরাধ এবং সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্টের কারণেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নেপালে প্রায় ৩ কোটি জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী।

তবে বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে। তাদের দাবি, বিরোধীরা যাতে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে সরকারের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করতে না পারে, সেই কারণেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সংসদে এই সংক্রান্ত বিল উপস্থাপন ঘিরে ইতিমধ্যেই ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিরোধীদের মতে, এটি জনগণের মৌলিক অধিকার খর্বের চেষ্টা।

পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ থেমে থেমে অব্যাহত রয়েছে। সেনা মোতায়েন করা হলেও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। রাজধানীর প্রধান সরকারি স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কড়া নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আন্দোলন এখন কেবল সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সীমাবদ্ধ নেই—এটি সরকারের দুর্নীতি ও কর্তৃত্ববাদী নীতির বিরুদ্ধেও বিস্তৃত আকার নিচ্ছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি/এনডি 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়