ফ্ল্যাট কিনলেই সাদা হবে কালো টাকা!

ফাইল ছবি
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আবারও অপ্রদর্শিত অর্থ—যা সাধারণভাবে কালোটাকা হিসেবে পরিচিত—সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট কেনা এবং ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রেই এই সুযোগ পাওয়া যাবে, তবে বাড়তি কর দিয়ে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানিয়েছে, নির্দিষ্ট হারে কর পরিশোধ করলেই অর্থের উৎস সম্পর্কে আর কোনো প্রশ্ন করা হবে না।
বাজেট প্রস্তাবে অঞ্চল ও আয়তন অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন করহার নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঢাকার অভিজাত অঞ্চল (গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল, দিলকুশা)
- ২,০০০ বর্গফুটের অধিক ফ্ল্যাট: প্রতি বর্গফুটে ২,০০০ টাকা
- ২,০০০ বর্গফুটের কম ফ্ল্যাট: প্রতি বর্গফুটে ১,৮০০ টাকা
- মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত অঞ্চল (ধানমন্ডি, মহাখালী, উত্তরা, বসুন্ধরা, চট্টগ্রামের খুলশী, আগ্রাবাদ প্রভৃতি):
- ২,০০০ বর্গফুটের অধিক ফ্ল্যাট: প্রতি বর্গফুটে ১,৮০০ টাকা
- ২,০০০ বর্গফুটের কম ফ্ল্যাট: প্রতি বর্গফুটে ১,৫০০ টাকা
অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকা
- ১,৫০০ বর্গফুটের অধিক ফ্ল্যাট: প্রতি বর্গফুটে ৭০০ টাকা
- ১,৫০০ বর্গফুটের কম ফ্ল্যাট: প্রতি বর্গফুটে ৬০০ টাকা
জেলা সদরের পৌরসভা এলাকা
- ১,৫০০ বর্গফুটের অধিক ফ্ল্যাট: প্রতি বর্গফুটে ৩০০ টাকা
- ১,৫০০ বর্গফুটের কম ফ্ল্যাট: প্রতি বর্গফুটে ২৫০ টাকা
গ্রাম ও অন্যান্য এলাকা
- ১,৫০০ বর্গফুটের অধিক ফ্ল্যাট: প্রতি বর্গফুটে ১৫০ টাকা
- ১,৫০০ বর্গফুটের কম ফ্ল্যাট: প্রতি বর্গফুটে ১০০ টাকা
- ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রেও:
এলাকাভেদে প্রতি বর্গফুটে ৫০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত কর নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ধূমপায়ীদের জন্য দুঃসংবাদ, আইসক্রিম প্রেমীদের মুখে হাসি
অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার ক্ষেত্রে দুটো গুরুত্বপূর্ণ শর্ত আরোপ করা হয়েছে
১. অর্থ যদি বর্তমানে কার্যরত কোনো আইনের আওতায় অপরাধমূলক উৎস থেকে অর্জিত হয়—যেমন: মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস অর্থায়ন, মাদক—তবে তা এই সুবিধার আওতায় আসবে না।
২. আয় যদি ‘বৈধ উৎস’ থেকে না আসে, অর্থাৎ ঘুষ বা চুরি-জালিয়াতির মতো অবৈধ পন্থায় অর্জিত হয়, তাহলেও তা সাদা করা যাবে না।
এই সুযোগকে ঘিরে সুশীল সমাজ ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এই পদক্ষেপকে সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, এই সুযোগ দুর্নীতিকে উৎসাহ দেয়, সামাজিক ন্যায্যতাকে ব্যাহত করে এবং সৎ নাগরিকদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ বলেন, বিদেশে অর্থ পাচার কমাতে এটি কিছুটা কার্যকর হতে পারে, কিন্তু নীতিগতভাবে এটা অনুচিত। কালোটাকা সাদা করার সুযোগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা উচিত।
২০২৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে আগের সরকার প্রদত্ত কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ বাতিল করেছিল। মাত্র ৯ মাস পরই নতুন করে বাজেটে সেই সুবিধা ফিরিয়ে আনা হলো, albeit বাড়তি করের বিনিময়ে।
এনবিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, পূর্বের সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকার অপ্রদর্শিত আয় সাদা করা হয়েছে।
ফ্ল্যাট বা ভবন কেনার মাধ্যমে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ আংশিকভাবে ফিরিয়ে এনেছে অন্তর্বর্তী সরকার, যার মধ্যে করহার বাড়ানো এবং কিছু সীমিত শর্ত আরোপ রয়েছে।
তবে, বিশেষজ্ঞরা এটিকে আইনের পরিপন্থী ও সামাজিকভাবে অনুচিত মনে করছেন, যেখানে অবৈধ অর্থের মালিকরা সুবিধা পাচ্ছেন এবং সৎ উপার্জনকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এই উদ্যোগ দুর্নীতি দমন নাকি রিয়েল এস্টেটকে উৎসাহ— তা নিয়ে বিতর্ক এখন তুঙ্গে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি