ফ্যাসিবাদ গেছে, দাবি এখনো পূরণ হয়নি: নজরুল ইসলাম খান
ছবি: সংগৃহীত
ভোটাধিকার বিলম্বিত হওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, কারো রাজনৈতিক দল গোছাতে সময় লাগতে পারে, কারো বন্ধু জোগাড় করতে সময় লাগতে পারে, কিন্তু এ জন্য জনগণের মৌলিক অধিকার ভোটাধিকার হরণ করা চলতে পারে না।
শুক্রবার (১৬ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে বাংলাদেশ লেবার পার্টি আয়োজিত ‘শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে মাওলানা মতিনের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এ সভাটি বাংলাদেশ লেবার পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবদুল মতীনের ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত হয়।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, গত আগস্টে ঘোষিত এক দফা আন্দোলনের একটি ধাপ সম্পন্ন হয়েছে ফ্যাসিবাদের পতনের মধ্য দিয়ে। এখন মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে বাকি দাবি পূরণের আশায়।
তিনি আরও বলেন, অনেক তরুণ ভোটার হয়েছেন বহু বছর আগে, কিন্তু তারা আজও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। এই অধিকার প্রয়োগ করতে চাওয়ার মধ্যে তাদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অধিকার নিহিত রয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, এই অধিকার আদায়ে বহু মানুষ কারাবরণ করেছেন, জীবন দিয়েছেন, নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
নজরুল ইসলাম বলেন, জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বরে হওয়া উচিত। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারা জুন মাসের মধ্যেই নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে করার যৌক্তিকতা কী?
তিনি আরও বলেন, অনেকে বলছেন, আগে সংস্কার করতে হবে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে—আপনারা কবে থেকে এই সংস্কারের কথা বলছেন?
এই প্রসঙ্গে তিনি ১৯৭৬-৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা, ২০১৬ সালে খালেদা জিয়ার ২০৩০ ভিশন, ২০২২ সালে তারেক রহমানের ২৭ দফা এবং ২০২৩ সালের ৩১ দফা আন্দোলন কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন: করিডোর ইস্যুতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচিত সরকার: ফারুক
আমরা সংস্কারের বিপক্ষে নই উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম খান, বরং আমরা শতভাগ সংস্কারের পক্ষে। তবে সংস্কার একটি প্রক্রিয়া, যা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করতে হয়। এটি কোনো একদিনে সমাধানযোগ্য বিষয় নয়।
নজরুল ইসলাম বলেন, অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে গঠিত ঐকমত্য কমিশন মে মাসের মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বোঝাপড়ায় পৌঁছাতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, যদি জুনের মধ্যে একটি সনদে সব রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর করে, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে সংস্কারের কিছু অংশ আইন বা অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব। যেসব সংস্কারের জন্য সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন, তা নির্বাচিত সংসদে তোলা যেতে পারে।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, এই কাজ যদি জুনে না হয়, তাহলে জুলাইয়ে হতেই পারে। তাহলে ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে বাধা কোথায়?
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের পরও মানুষের সব দাবি বাস্তবায়িত হয়নি। গণতন্ত্রের পূর্ণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়নি। জনগণের শাসনের বিকল্প কিছু নেই। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার ধীর হতে পারে, ভুল করতে পারে, কিন্তু এটাই এখনো পর্যন্ত সর্বোত্তম পদ্ধতি।
তিনি বলেন, যারা নির্বাচন বিলম্ব করতে চায়, তাদের প্রতি প্রশ্ন—কোন যুক্তিতে ডিসেম্বরের পর নির্বাচন হওয়া উচিত? নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত, রাজনৈতিক ঐকমত্যের পথে অগ্রগতি হচ্ছে—তাহলে দেরি কেন?
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান খান ইরান, মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম, মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী মো. আবুল খায়ের, লেবার পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান জোহরা খাতুন জুঁই, এস এম ইউসুফ আলী, নাজিম উদ্দিন আলম, নাসিমা নাজনীন সরকার, মো. মিরাজ খান, সেলিম রেজা, জাহিদুল ইসলাম, ওবায়দুল হক, মুফতি আরিফ বিন শহীদ, সালমান খান বাদসা, সৈয়দ মো. মিলন ও নাজমুল ইসলাম মামুন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








