২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও ১০৮

ফাইল ছবি
গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ডেঙ্গুতে নতুন করে আক্রান্ত হয়ে ১০৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে জাতীয় পর্যায়ে এ সময়ে নতুন কোনো মৃত্যুর খবর না থাকলেও বরিশাল বিভাগে এক কিশোরীসহ তিনজনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
চলতি বছরে সারাদেশে ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যু ২৩ জন এবং আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪১১ জনে।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গু সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, ১২ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্ত ১০৮ জন।
তাদের মধ্যে বরিশালে ৮৯ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১০ জন, চট্টগ্রামে ৪ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি এলাকার বাইরে) ৩ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১ জন এবং রাজশাহীতে ১ জন।
একই সময়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৭৫ জন রোগী।
বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুর প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে নতুন করে ১২৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ সময় মৃত্যু হয়েছে তিনজনের।
মারা যাওয়া তিনজন হলেন পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার সুঠিয়া কাঠি গ্রামের বাসিন্দা ইসরাত জাহান (২০), বরগুনা জেলার বালিয়াতলী ইউনিয়নের চারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা চাঁন মিয়া (৭৫), বরগুনা সদর উপজেলার থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ঘোসাই দাস (৮৫)।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৮৮
তারা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বরগুনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে ১২ জুন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২ হাজার ৪৮৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ১৫৫ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ৩২৪ জন।
বরগুনা জেলায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। জেলায় এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩৫৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের, যা বিভাগীয় মোট মৃত্যুর ৭ জনের মধ্যে অধিকাংশ।
চলতি বছরে (১ জানুয়ারি – ১২ জুন ২০২৫) ডেঙ্গু আক্রান্ত মোট ৫ হাজার ৪১১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৯.৬ শতাংশ এবং নারী ৪০.৪ শতাংশ।
২০২৪ সালের পুরো বছরজুড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন, মৃত্যু হয়েছিল ৫৭৫ জনের।
২০২৩ সালে মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের, আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।
চলতি বছরের প্রাথমিক সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষাকাল সামনে থাকায় ঝুঁকি বাড়ছে।
ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, এবার ডেঙ্গুর চরিত্র একটু ভিন্ন। শুধু বৃষ্টির জন্য নয়, বরং জনসচেতনতার অভাবে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে। বৃষ্টির পানি জমে থাকা ছাড়াও নানা উৎস থেকে মশা বিস্তার করছে।
তিনি আরও জানান, সরকারি হাসপাতালের পরিসংখ্যানে শুধুমাত্র ভর্তি হওয়া রোগীদের তথ্য রয়েছে। অনেক রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বা বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি হচ্ছেন, যাদের সংখ্যা ধরা হয় না। এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিলে ডেঙ্গুর প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, মশা জন্মাতে পারে এমন স্থান যেমন— ফুলের টব, পরিত্যক্ত টায়ার, ছাদে জমে থাকা পানি ইত্যাদি নিয়মিত পরিষ্কার করা অত্যাবশ্যক। পাশাপাশি প্রশাসন, স্থানীয় সরকার ও সাধারণ মানুষকে সমন্বিতভাবে কাজ করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি