News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২০:৫৩, ১৬ জুন ২০২৫

নীরবে ছড়াচ্ছে করোনা: বরিশাল-চট্টগ্রামে প্রথম শনাক্ত ও মৃত্যু 

নীরবে ছড়াচ্ছে করোনা: বরিশাল-চট্টগ্রামে প্রথম শনাক্ত ও মৃত্যু 

ফাইল ছবি

চলতি ২০২৫ সালে বরিশাল ও চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগী শনাক্ত এবং একজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আক্রান্তের বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগীয় দপ্তর গোপনীয়তা বজায় রাখায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে জনমনে। একইসঙ্গে চট্টগ্রামে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বরিশালে প্রথম শনাক্ত, কিন্তু দুইদিন গোপন রাখে স্বাস্থ্য বিভাগ

শনিবার (১৪ জুন) বরিশাল সদর জেনারেল হাসপাতালে কোভিড-১৯ পরীক্ষায় ‘তুষার’ (৩০) নামের এক ব্যক্তির করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। এরপরও বিষয়টি সোমবার (১৬ জুন) পর্যন্ত গোপন রাখা হয়। 

এ বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল জানান, তুষার বর্তমানে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। তিনি বরিশাল জেলার বাসিন্দা। আপনারা আমাদের ওপর আস্থা রাখুন, আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি।

তবে আক্রান্ত ব্যক্তির পূর্ণাঙ্গ পরিচয়, ঠিকানা বা স্বাস্থ্যগত ইতিহাস কিছুই নিশ্চিত করতে পারেননি কর্মকর্তারা।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল জানান, তুষারকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলেও তিনি পরীক্ষা শেষে কাউকে না জানিয়েই রিপোর্ট নিয়ে চলে যান। সরকারি ল্যাবে পরীক্ষার সময় কেবল নাম ও বয়স নেওয়া হয়, তাই বিস্তারিত পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। 

তিনি আরও জানান, তুষারের হালকা জ্বর ছাড়া করোনার তেমন উপসর্গ ছিল না এবং তিনি গুরুতর অসুস্থ নন।

চট্টগ্রামে প্রথম করোনা মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত ১০

চট্টগ্রামে সোমবার (১৬ জুন) কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে শফিউল ইসলাম (৭৫) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তিনি মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা এবং দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগে ভুগছিলেন। চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একাধিকবার ডায়ালাইসিস করা হয়। করোনা শনাক্তের পর তিনি নিজ বাড়িতে চলে যান এবং সেখানেই মারা যান।

আরও পড়ুন: একদিনে করোনায় আরও ১ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ২৬

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, একই দিনে নতুন করে আরও ১০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৭ জন চট্টগ্রাম মহানগরের এবং ৩ জন জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। এদের নমুনা পরীক্ষার জন্য নগরীর পাঁচটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মোট ১২০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়।

সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, শফিউল ইসলাম আগে থেকেই পোস্ট-অপারেটিভ জটিলতা ও কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন। মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়া জরুরি।

আট দিনে চট্টগ্রামে ২৮ জন শনাক্ত

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত আট দিনে (৮ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত) চট্টগ্রামে মোট ২৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২২ জন চট্টগ্রাম মহানগরের এবং বাকি ৬ জন জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।

সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় নাগরিকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন। 

তিনি বলেন, মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চললেই আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব।

বরিশালে শনাক্তের বিষয়টি গোপন রাখার সিদ্ধান্ত এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সম্পর্কে তথ্য না থাকা প্রশাসনিক অযোগ্যতার ইঙ্গিত দেয়। 

অন্যদিকে, চট্টগ্রামে মৃত্যুর ঘটনা ও শনাক্ত বৃদ্ধির পরিসংখ্যান সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরছে নতুন করে সংক্রমণের ঝুঁকি। দুই জেলার প্রেক্ষাপটেই স্পষ্ট যে কোভিড মোকাবেলায় জনসচেতনতা, তথ্যের স্বচ্ছতা এবং স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তৎপরতা এখন আরও বেশি জরুরি।

জনগণকে পুনরায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার এবং হালকা উপসর্গ দেখা দিলেই পরীক্ষা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ও জনগণের সম্মিলিত সহযোগিতা এখন সময়ের দাবি।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়