কালো টাকা সাদা করার বৈধতায় আপত্তি এনবিআরের

ফাইল ছবি
কালো টাকা সাদা করার বিতর্কিত ব্যবস্থাকে স্থায়ীভাবে বাতিলের চিন্তা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বিষয়টি নিয়ে অভ্যন্তরীণ আলোচনা এগোলেও এখনো অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কোনো চূড়ান্ত নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা এলেই সংশ্লিষ্ট অর্থ অধ্যাদেশে সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে এনবিআর।
উল্লেখ্য, অবৈধভাবে অর্জিত অপ্রদর্শিত আয়ের অর্থ বৈধ করার সুযোগ বছরের পর বছর নানা সরকারের বাজেটে রাখা হয়েছে। কখনও করের হার কমিয়ে, কখনও বিশেষ শর্তে সাধারণ ক্ষমার আওতায় এনে কালো টাকা সাদা করার সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার ও এনবিআর।
গত ১৩ জুন ২০২৫ তারিখে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন প্রথম বাজেট উপস্থাপন করেন, যেখানে ফ্ল্যাট ও ভবনে বিনিয়োগ করা অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়। তবে করের হার ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয় এবং সাধারণ ক্ষমার শর্ত কিছুটা কঠোর করা হয়। বাজেট ঘোষণার পরদিন, ১৪ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে ড. সালেহ উদ্দিন ইঙ্গিত দেন যে ব্যাপক সমালোচনার মুখে এ বিষয়ে তার অবস্থানে পরিবর্তন আসতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের করনীতি বিভাগের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিল করার বিষয়ে তারা একমত। ইতোমধ্যে এনবিআরের ভেতরে নীতিগত আলোচনা হয়েছে, তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত নির্দেশনা না থাকায় এখনও কোনো প্রস্তাবনা ফাইল আকারে তৈরি হয়নি।
দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এ বিষয়ে তাদের তীব্র আপত্তি জানিয়েছে।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কালো টাকা সাদা করার বিধান দুর্নীতিকে বৈধতা দেয় এবং অপরাধকে সুরক্ষা দেয়। এটি একটি বেআইনি অর্থনৈতিক সংস্কৃতিকে রাষ্ট্রীয় ছত্রছায়ায় রক্ষা করার সামিল। আমরা আশা করি সরকার এবার সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে এবং এ ব্যবস্থা থেকে সরে আসবে।
তিনি আরও বলেন, টিআইবি বহু বছর ধরেই এ ধরনের ব্যবস্থা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে, কারণ এটি দেশের আর্থিক শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ ধারাবাহিকভাবে থাকলে প্রান্তিক ও নিয়মিত করদাতাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ বলেন, যে মানুষ নিয়মিত কর দেয়, তারা বারবার দেখছে যারা কর ফাঁকি দেয় তারাই শেষমেশ সরকারের কাছ থেকে সুযোগ পায়—এটা খুবই হতাশাজনক ও রাষ্ট্রীয় ন্যায়ের পরিপন্থী।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগে থেকেই এনবিআরের অভ্যন্তরে এ বিষয়ে নীতিগত অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন শুরু হয়। তবে, ১৩ জুন যে বাজেট ঘোষণা করা হয় তাতে কালো টাকা সাদা করার বিধান পুরোপুরি বাতিল করা হয়নি। বরং শর্ত কিছুটা কঠোর করা হলেও সুযোগ বজায় রাখা হয়।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, করের হার বাড়িয়ে দিয়ে এবং সাধারণ ক্ষমা সীমিত রেখে মূলত এটি নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কর্মকর্তারা মনে করছেন, এতো উচ্চ হারে কর বসালে বাস্তবে কেউ এ সুবিধা নিতে আগ্রহী হবেন না। অর্থাৎ, এটি কার্যত বাতিলের সামান্যতম রূপ হলেও আইনি কাঠামোতে এখনও বহাল রয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি