ইরানের সঙ্গে আকাশ-স্থল যোগাযোগ বন্ধ করল পাকিস্তান

ছবি: সংগৃহীত
তেহরান ও তেল আবিবের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার ছায়া এবার সরাসরি পড়ল পাকিস্তান-ইরান সীমান্তে। চলমান মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতের প্রেক্ষাপটে প্রতিবেশী ইরানের সঙ্গে সব ধরনের আকাশ ও স্থল যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তান।
রবিবার (১৫ জুন) থেকে এই পদক্ষেপ কার্যকর হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পাকিস্তান সরকারের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা।
সোমবার (১৬ জুন) আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা সূত্রগুলো জানিয়েছে, সীমান্ত বন্ধের পদক্ষেপ প্রথমে নেয় ইরান। এরই জবাবে পাকিস্তানও আকাশসীমা ও স্থলসীমান্ত ‘সিল’ করে দেয়।
ফলস্বরূপ, পাকিস্তান ও ইরানের ৯০৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তজুড়ে আটকা পড়েছেন শত শত মানুষ— যারা মূলত দুদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বসবাস করেন এবং পারিবারিক, অর্থনৈতিক বা চিকিৎসাজনিত কারণে নিয়মিত যাতায়াত করতেন।
সীমান্ত বন্ধের ফলে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হয়েছে পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তান। বিশেষ করে তাফতান (চাগি জেলা), গাবদ-রিমদান (গোয়াদর জেলা), ও পাঞ্জগুর, তুরবত, মাশকাইল, ওয়াশুকসহ আশেপাশের জেলার জনগণ পড়েছেন তীব্র খাদ্য ও জ্বালানি সংকটের মুখে। কারণ, এসব অঞ্চলে তাজা শাকসবজি, ফলমূল ও চোরাচালানপথে আসা জ্বালানির জন্য ইরানের ওপর নির্ভরতা বহুদিনের।
আরও পড়ুন: ইরানের ৪ শীর্ষ গোয়েন্দা নিহতের খবর নিশ্চিত করল ইসরায়েল
গোয়াদরের স্থানীয় বাসিন্দা বাশাম বালোচ তুরস্কভিত্তিক বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সিকে ফোনে জানান, দাম বাড়তে শুরু করেছে। পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে, তবে এটি মাত্র দ্বিতীয় দিন। সীমান্ত আরও কয়েক দিন বন্ধ থাকলে বেলুচিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভয়াবহ সংকট দেখা দিতে পারে।
বেলুচিস্তান প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র শহিদ রিন্দ জানান, ইরান যখন একতরফাভাবে সীমান্ত বন্ধ করে, তখন জবাবে পাকিস্তানও সীমান্ত ক্রসিংগুলো বাণিজ্য এবং পথচারী চলাচলের জন্য সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়।
তিনি আরও জানান, ইরানে আটকে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদের শুধুমাত্র ফিরে আসার অনুমতি দেওয়া হবে। তবে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কোনো পাকিস্তানি নাগরিককে ইরানে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
তাফতান সীমান্ত দিয়ে আটকে পড়া প্রথম দলটির সোমবার (১৬ জুন) পাকিস্তানে ফেরার কথা রয়েছে।
পাকিস্তানের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (CAA) জানিয়েছে, চলমান উত্তেজনার কারণে পাকিস্তান থেকে ইরান ও ইরাকগামী বেশ কিছু আন্তর্জাতিক বিমানসংস্থা তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে। এতে করে আঞ্চলিক সংযোগ ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত শুধু একটি আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা নয়, বরং তা একাধিক দেশের সীমান্তবর্তী জনজীবনে মানবিক সংকট তৈরি করতে শুরু করেছে। সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি, মূল্যবৃদ্ধি, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানে ব্যাঘাত— সবমিলিয়ে সীমান্তবর্তী সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় গভীর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি