ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত দ্রুত ইসিকে জানান: সালাউদ্দিন

ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আয়োজনের লক্ষ্যে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে যথাযথ প্রক্রিয়ায় যোগাযোগ স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কল্যাণ রাষ্ট্রের ভাবনায় জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
সভায় সভাপতিত্ব করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলব, জনগণের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে আমরা যেন অতিদ্রুত ডেমোক্রেটিক ট্রান্সফরমেশনে যেতে পারি সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করুন। লন্ডনের আলোচনার ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা খুব শিগগির নির্বাচন কমিশনের কাছে যথাযথ প্রক্রিয়ায় কমিউনিকেট করা হোক। যাতে ইসি জনগণের সামনে বলতে পারে, তারা সরকারের কাছ থেকে একটি পরামর্শমূলক বা নির্দেশনামূলক বার্তা পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কনস্টিটিউশনালি এই সরকারের র্যাটিফিকেশন পরবর্তী সংসদে লাগবে। সেটা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। কোথায় এবং কীভাবে এই বৈধতা প্রদান করা হবে, সেটাও আমরা বিবেচনায় আনব।
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের এই বক্তব্য আসে এমন এক সময়ে, যখন গত ১৩ জুন (শুক্রবার) লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে সংস্কার ও বিচার কার্যক্রমে অগ্রগতির ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারির আগে ভোট আয়োজনের সম্ভাবনার বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্য রয়েছে। তবে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে রমজান শুরুর আগের সপ্তাহেও নির্বাচন হতে পারে।
আরও পড়ুন: বিএনপির কথা না শুনলে ওসিগিরি ছেড়ে চলে যেতে হবে
সালাহউদ্দিন আহমদ সভায় বলেন, অনেকেই জানতে চাচ্ছেন, লন্ডনে কোনো দায়মুক্তির আলোচনা হয়েছে কি না। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, কারো দায়মুক্তি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সেখানে শুধুমাত্র ভবিষ্যতের ট্রানজিশনাল পরিকল্পনা, নির্বাচন এবং সাংবিধানিক কার্যক্রমের বিষয়েই আলোচনা হয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভাইজারি রুল এবং সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৬ অনুসারে। সংবিধান অনুসারেই এই সরকার চলছে। উপদেষ্টারা মন্ত্রীর মর্যাদা ভোগ করছেন এবং তাদের আর্টিকেল ৬৬ অনুযায়ী সংসদ সদস্য হওয়ার মতো যোগ্যতা থাকা উচিত।
তিনি সতর্ক করে বলেন, উপদেষ্টাদের ক্ষেত্রে বিদেশি নাগরিকত্ব অনুমোদন করা হয়নি। এটি সংবিধানে অনুমোদিত নয়। যারা উপদেষ্টা হয়েছেন, তাদের এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।
রবিবার (১৫ জুন) ঈদের ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবসে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকরা লন্ডনের বৈঠকের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ঘোষণাটি আমরা সংবাদমাধ্যম থেকেই জেনেছি। এটি আন-সাইনড যৌথ বিবৃতি। কোনো পক্ষের স্বাক্ষর নেই, তাই এটা অফিসিয়াল ডকুমেন্ট হিসেবে ধরে নেওয়া যায় না। অফিসিয়ালি কিছু না এলে আমরা কিছু করতেও পারি না। ইতিহাসের পেছনেও ইতিহাস থাকে, আলাপের পেছনেও আলাপ থাকে।
সিইসি আরও বলেন, ভবিষ্যতে কী হবে তা জানি না, তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমাদের ভেতরের আলোচনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।
সভার অন্যান্য আলোচকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী জনশক্তি পার্টির সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার।
সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্য একটি সুসংগঠিত ও সাংবিধানিক প্রেক্ষাপটে স্থাপিত স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা—যা নির্বাচন, সরকার কাঠামো এবং ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ। লন্ডনের আলোচনা ও দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি মিলিয়ে তিনি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে নির্বাচন বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জোর আহ্বান জানান।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি