ইরানের ৪ শীর্ষ গোয়েন্দা নিহতের খবর নিশ্চিত করল ইসরায়েল

ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ধারাবাহিকতায় এবার প্রাণ গেল ইরানের চারজন শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তার। গোয়েন্দা, সন্ত্রাসদমন এবং আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের নেপথ্য নকশাকারীরা এবার সরাসরি ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়ে পড়লেন।
সর্বশেষ ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর চালানো এক উচ্চমাত্রার আক্রমণে ইরানের বিপ্লবী গার্ড (IRGC)-এর গোয়েন্দা শাখার প্রধানসহ চারজন শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
রবিবার (১৫ জুন) রাতে ফক্স নিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে হামলার বিষয়টি সরাসরি নিশ্চিত করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানান, তেহরানের একটি নিরাপত্তা কমপ্লেক্সকে লক্ষ্য করে চালানো এই বিমান হামলায় নিহত হন
বিপ্লবী গার্ড গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান (২০২২ থেকে দায়িত্বে) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ কাজেমি, কৌশলগত গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক প্রধান ও কাজেমির ডেপুটি মোহাম্মদ হাসান মহাগাকী, কুদস ফোর্সের গোয়েন্দা পরিচালক মোহসেন বাঘেরি, বাঘেরির সহকারী এবং লেবানন ও সিরিয়ায় ইরানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর সহায়তাকারী আবু আল-ফজল নিকৌই।
ইসরায়েলি সূত্র বলছে, নিহত কর্মকর্তারা হিজবুল্লাহ, হামাস, হুথি ও ইরাকি প্রো-ইরান মিলিশিয়াদের গোয়েন্দা ও সামরিক সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন। এদের হত্যা ইরানের আঞ্চলিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক পরিচালনায় বড় ধরণের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে বলে দাবি করেন আইডিএফ মুখপাত্র।
নিহত প্রধান কাজেমিকে ইরানের অভ্যন্তরীণ বিরোধীদের দমন ও রাষ্ট্রীয় নজরদারি কাঠামোর স্থপতি হিসেবে চিহ্নিত করেছে ইসরায়েল। তার ডেপুটি মহাগাকীও সরাসরি সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: তেল আবিব ও হাইফায় ‘নতুন কৌশলে’ ইরানের হামলা
কুদস ফোর্সের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক মোহসেন বাঘেরি এবং তার সহকারী নিকৌই মূলত মধ্যপ্রাচ্যে ‘প্রতিরোধ অক্ষ’ গঠনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। সিরিয়ায় ইরানপন্থী উপস্থিতি ও লেবাননে হিজবুল্লাহর সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে তাদের অবদান উল্লেখযোগ্য ছিল।
এ হামলার মাত্র দুদিন আগে, গত ১৩ জুন, তেহরানে আরেকটি সফল ইসরায়েলি হামলায় বিপ্লবী গার্ড-এর কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি, ইরানের সামরিক প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ হোসেইন বাঘেরি, এবং বিমান মহাশাখার কমান্ডার আমির আলী হাজিজাদেহ নিহত হন। একই অপারেশনে নিহত হন খাতাম আল-আন্বিয়া হেডকোয়ার্টারের প্রধান জেনারেল গোলাম আলী রশিদ এবং ১৪ জন পারমাণবিক বিজ্ঞানীও।
এই পরিস্থিতিকে ইসরায়েল “অপারেশন রাইজিং লায়ন” এর অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছে, যেখানে এক সপ্তাহে একাধিক গোপন ও খোলা অপারেশনের মাধ্যমে ইরানের আঞ্চলিক নেতৃত্ব কাঠামোয় বারবার আঘাত হানা হচ্ছে।
ইসরায়েলি সরকার বলছে, এই অভিযান ইরানের গোয়েন্দা ও সন্ত্রাসী সক্ষমতার শিকড় কেটে ফেলবে।
অন্যদিকে ইরান ঘোষণা দিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের কঠোর জবাব দেওয়া হবে। প্রতিশোধে শুরু হওয়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চলমান থাকবে।
ইতোমধ্যে ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ১৩ জনের প্রাণহানি ও শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা দ্রুত গতিতে একটি বিস্তৃত সামরিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা বাড়ছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি