News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৩:০০, ২০ জুন ২০২৫

বৃষ্টিতে চড়া সবজির দাম, স্বস্তিতে ডিম-মুরগি

বৃষ্টিতে চড়া সবজির দাম, স্বস্তিতে ডিম-মুরগি

ছবি: সংগৃহীত

গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও ঈদুল আজহার ছুটি পরবর্তী সময়ে রাজধানী ঢাকার কাঁচাবাজারে নিত্যপণ্যের দামে দেখা দিয়েছে মিশ্রতা। একদিকে সবজির সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে, অন্যদিকে মুরগি ও ডিমের বাজারে স্বস্তি ফিরেছে। চালের বাজারে আবার নতুন করে ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

শুক্রবার (২০ জুন) যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, দোলাইরপাড়, মোহাম্মদপুর টাউন হলসহ রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ সবজির কেজিপ্রতি দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। 

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, টানা বৃষ্টির কারণে মাঠে পানি জমে গেছে, ফলে ফসল তোলা এবং পরিবহন—উভয় ক্ষেত্রেই সমস্যা হচ্ছে। এর ফলে ঢাকায় সবজির সরবরাহ কমে গেছে এবং দাম বেড়েছে।

শুক্রবার (২০ জুন) বাজার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় লাউ, জালি কুমড়া (প্রতি পিস) ৪০–৬০ টাকা, করলা, পটল, ঢেঁড়স, বরবটি, শসা, বেগুন, কাঁকরোল, ঝিঙা ৪০–৬০ টাকা কেজি, চিচিঙা, পেঁপে, ধুন্দল, লতি ৪০–৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া দেশি শসা ৫০ টাকা, হাইব্রিড শসা ২০ টাকা, কাচামরিচ ৪০–৬০ টাকা (কোনও বাজারে ৮০–১০০ টাকা), গাজর ৫০ টাকা, টমেটো ৪০–৮০ টাকা, বেগুন ৭০–১০০ টাকা (লম্বা ও গোল বেগুনি রঙের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে), লেবুর হালি ২০–৩০ টাকা (কোনও বাজারে ১০–১৫ টাকাও), শজনে ডাঁটা ১০০–১২০ টাকা কেজি।

সবজি বিক্রেতা জামাল হোসেন বলেন, বৃষ্টির কারণে মাল কম এসেছে। আমরা নিজেরাও বেশি দামে সবজি কিনে আনছি। 

বিক্রেতারা আশা করছেন, বৃষ্টি থামলে এক-দুই দিনের মধ্যে সরবরাহ স্বাভাবিক হবে এবং দামও কমে আসবে।

ঈদুল আজহার কোরবানির কারণে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীতে মাংসের চাহিদা কম। এর প্রভাবে ডিম ও মুরগির বাজারে দাম নিম্নমুখী থেকেছে। 

আরও পড়ুন: সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের রেকর্ড আমানত

এদিন রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়, যা ঈদের আগে ছিল ১৭০–১৮০ টাকা। সোনালি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০–৩০০ টাকা কেজিতে, যা পূর্বের দরের চেয়ে ২০–৩০ টাকা কম।

বর্তমান দর অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ১৪০–১৫০ টাকা/কেজি, সোনালি মুরগি (কক) ২৫০–৩০০ টাকা/কেজি। 

ফার্মের ডিম ১১৫–১২৫ টাকা/ডজন। ঈদের আগে ডিমের দাম ছিল ১৩০–১৩৫ টাকা।

মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারে ব্রয়লার হাউসের ম্যানেজার মো. শাকিল বলেন, ঈদের পর কোরবানির মাংস থাকায় মুরগির চাহিদা কম, তাই দামও কমে গেছে।

ক্রেতা মামুনের মত, অনেকদিন ধরে ১৮০–২০০ টাকায় ব্রয়লার কিনছি। এখন ১৪০ টাকায় পাচ্ছি, কিন্তু জানি না আবার কবে বাড়বে। সিন্ডিকেট না ভাঙলে রক্ষা নেই।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে মাছের দামে এখনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়নি। তবে দেশি জাতের শিং ও কৈ মাছের দাম অন্যান্য মাছের তুলনায় অনেক বেশি।

বর্তমান দরে রুই মাছের দাম ২৮০–৪০০ টাকা, কাতল ৩০০–৩৪০ টাকা, পাবদা ২৫০–৩৫০ টাকা, চিংড়ি ৬৫০–৮০০ টাকা, টেংরা ৪০০–৫০০ টাকা, শিং ৩০০–৪৫০ টাকা (দেশি শিং ১২০০ টাকা), কৈ ২০০–২২০ টাকা (দেশি কৈ ১০০০ টাকা), তেলাপিয়া, পাঙ্গাস ১৮০–২০০ টাকা, কাচকি মাছ ৪০০–৫০০ টাকা, 

ইরি-বোরো মৌসুমের নতুন চাল আসায় জুনের শুরুতে চালের দাম কিছুটা কমলেও ঈদের পর মিলমালিকদের দৌরাত্ম্যে আবারও দাম বেড়েছে। দিনাজপুর, নওগাঁ, কুষ্টিয়াসহ মোকামগুলোতে মিলগেট পর্যায়ে ৫০ কেজির বস্তা ৫০–২৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম ২–৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

বর্তমান দরে মোটা চাল (বিআর-২৮, পারিজা) ৫৮–৬২ টাকা/কেজি, জিরাশাইল ৭৪–৭৮ টাকা/কেজি, মিনিকেট ৭৬–৮০ টাকা/কেজি (কিছু জায়গায় ৮০ টাকা ছুঁয়েছে), কাটারিভোগ ৭০–৭৫ টাকা/কেজি, আটাশ চাল ৬২–৬৫ টাকা, মোটা চাল (অন্য প্রজাতি) ৫২–৫৫ টাকা (আগের মতোই)।

কৃষি মার্কেটের বিক্রেতা শওকত আলী বলেন, মিলমালিকরা ঈদের পর চিকন চালের দাম বাড়িয়েছে, তাই আমরাও বেশি দরে বিক্রি করছি।

পেঁয়াজ, আলু, রসুন, আদাসহ অন্যান্য পণ্যের বাজারে ঈদের পর তেমন হেরফের দেখা যায়নি।

পেঁয়াজ ৫০–৬০ টাকা/কেজি, দেশি আদা ১২০–১৩০ টাকা, আমদানি করা আদা ১৮০–২২০ টাকা, দেশি রসুন ১৪০–১৬০ টাকা, আমদানি করা ১৮০–২২০ টাকা, আলু ২০–২৫ টাকা/কেজি, 

২০২৫ সালের জুন মাসের দ্বিতীয়ার্ধে ঢাকার কাঁচাবাজারে সবজির মূল্যবৃদ্ধি মূলত আবহাওয়া নির্ভর অস্থায়ী সমস্যা হিসেবে দেখা দিলেও, চালের দাম বৃদ্ধি ও মিলমালিকদের ভূমিকা বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠছে। 

অন্যদিকে ডিম, মুরগি ও মাছের বাজারে রয়েছে আপাত স্বস্তি। তবে সেসবও দীর্ঘস্থায়ী না-ও হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ক্রেতারা।  

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়