News Bangladesh

তথ্য-প্রযুক্তি ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৪:৩৬, ২০ জুন ২০২৫

আবারও ব্যর্থ স্পেসএক্স, বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন স্টারশিপ

আবারও ব্যর্থ স্পেসএক্স, বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন স্টারশিপ

ছবি: সংগৃহীত

মহাকাশ অভিযানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে নির্মিত ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের স্টারশিপ রকেট আবারও বিস্ফোরিত হয়েছে। 

স্থানীয় সময় বুধবার (১৮ জুন) রাত ১১টা কিছু পর টেক্সাসের ব্রাউনসভিলে অবস্থিত স্পেসএক্সের স্টারবেজ সদর দপ্তরের উৎক্ষেপণ প্যাডেই ঘটে এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ। এটি ছিল স্টারশিপ রকেটের দশম পরীক্ষামূলক ফ্লাইটের প্রস্তুতিপর্ব।

বিস্ফোরণের সময় রকেটটি পরীক্ষামূলক টেস্ট স্ট্যান্ডে স্থাপিত ছিল। হঠাৎ করেই এতে একটি গুরুতর অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে, মুহূর্তের মধ্যে আকাশ আলোকিত করে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, স্টারশিপ রকেটটিতে প্রায় পরপর দুটি বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের আগুনে ঝলকে রাতের আকাশ গোলা রঙের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে এবং ধ্বংসাবশেষ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

স্পেসএক্স এক বিবৃতিতে জানায়, রকেটটি স্টারবেজের টেস্ট স্ট্যান্ডে থাকাকালীন বড় ধরনের একটি ‘অস্বাভাবিকতা’র সম্মুখীন হয়। তবে সাইটটি ঘিরে নিরাপদ অঞ্চল নির্ধারণ করা ছিল এবং সব কর্মী নিরাপদে আছেন।

স্পেসএক্স মালিক ইলন মাস্ক তার মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে জানান, প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, স্টারশিপের পে-লোড বেতে থাকা একটি নাইট্রোজেন সিওপিভি নির্ধারিত পরীক্ষামূলক চাপ অর্জনের আগেই ফেটে যায়। 

মাস্ক বলেন, এই দুর্ঘটনার পেছনে সিওপিভি’র বিস্ফোরণ যদি সত্যিই প্রধান কারণ হয়, তবে এটি হবে এই ডিজাইনের ক্ষেত্রে প্রথম ব্যর্থতা।

স্পেসএক্স স্থানীয়, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথভাবে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে। এফএএ (ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন)-এর অনুমতি ও ভবিষ্যৎ পরীক্ষার জন্য রিভিউ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন: ভিডিও নয়, দৈর্ঘ্যের সীমা ছাড়া রিলসেই ফেসবুক

স্টারশিপ রকেট, যা মূলত ইলন মাস্কের মঙ্গল গ্রহে মনুষ্যবসতির স্বপ্নের প্রধান বাহন, তা ২০২৫ সালজুড়ে একের পর এক ভয়াবহ ব্যর্থতার মুখে পড়েছে।

জানুয়ারি ২০২৫: উৎক্ষেপণের কয়েক মিনিট পরই একটি স্টারশিপ রকেট মহাকাশে বিস্ফোরিত হয়। এর ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়ে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ জুড়ে। তুর্কস অ্যান্ড কাইকোস দ্বীপে একটি গাড়িতে ধ্বংসাবশেষ আঘাত করে, যদিও বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

মার্চ ২০২৫: স্টারশিপ মহাকাশে পৌঁছানোর কয়েক মিনিট পর বিস্ফোরিত হয়। ফ্লোরিডা ও বাহামার আকাশে জ্বলন্ত ধ্বংসাবশেষ ছুটে যেতে দেখা যায়। এফএএ এই ঘটনার পর ফ্লোরিডার আকাশপথ আংশিকভাবে বন্ধ করে দেয়।

এপ্রিল ২০২৫: এফএএ প্রকাশিত তদন্তে জানায়, মার্চের বিস্ফোরণের জন্য একটি ইঞ্জিনের যান্ত্রিক ত্রুটিই দায়ী। এ ঘটনায় স্পেসএক্সকে ৮টি সংশোধনী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়।

মে ২০২৫: আরেকটি স্টারশিপ রকেট টেস্ট ফ্লাইট চলাকালীন মাঝ আকাশে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং গুরুত্বপূর্ণ ধাপ পূরণে ব্যর্থ হয়। ধ্বংসাবশেষ ক্যারিবীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় কিছু বিমানকে রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য করা হয়।

স্পেসএক্সের স্টারশিপ রকেট হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী মহাকাশযান, যার উচ্চতা প্রায় ৪০০ ফুট (১২২ মিটার)। এই রকেটের মাধ্যমে ইলন মাস্ক শুধু মঙ্গলে নয়, চাঁদেও নভোচারী পাঠাতে চান। এমনকি নাসার আর্টেমিস প্রকল্পেও স্টারশিপের ওপর নির্ভর করা হচ্ছে। তবে বারবার ব্যর্থতা এখন এই স্বপ্নগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।

ফরচুন ও এনডিটিভির বিশ্লেষণ বলছে, দশম ফ্লাইটের প্রস্তুতির সময় এই বিস্ফোরণ স্টারশিপ কর্মসূচিতে এক ‘বিপর্যয়কর ধাক্কা’। মাস্কের মঙ্গল পরিকল্পনা ও স্পেসএক্সের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।

একাধিক ব্যর্থতা সত্ত্বেও, ইলন মাস্ক এখনো মঙ্গল গ্রহে মানুষের পা রাখার স্বপ্ন ছাড়ছেন না। কিন্তু ১৮ জুন ২০২৫-এর এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ তার স্বপ্নের পথে আরও একটি বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করল। তদন্তের ফলাফল ও পরবর্তী পদক্ষেপেই নির্ধারিত হবে—স্টারশিপের ভবিষ্যৎ কতটা উজ্জ্বল, নাকি অনিশ্চয়তার।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়