News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৪:১৯, ১৯ জুন ২০২৫
আপডেট: ১৬:১৩, ১৯ জুন ২০২৫

জ্বালানি-বায়ু খাতে বিশ্বব্যাংকের ৬৪০ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন

জ্বালানি-বায়ু খাতে বিশ্বব্যাংকের ৬৪০ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের জ্বালানি সরবরাহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও শহুরে বায়ু দূষণ হ্রাসে দুটি বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পে ৬৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই সহায়তার পরিমাণ প্রায় ৭ হাজার ৮২২ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২.২২ টাকা ধরে)। 

বুধবার (১৮ জুন) বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালনা পর্ষদ এই অর্থায়নের অনুমোদন দেয়। পরদিন বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ঢাকাস্থ বিশ্বব্যাংক অফিস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানায়।

এই অর্থায়নের আওতায় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে পেট্রোবাংলা, যা দেশের এলএনজি সরবরাহে নিরাপত্তা ও টেকসই অর্থনৈতিক মডেল গড়ে তুলবে। অন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে পরিবেশ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে, যার মাধ্যমে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রধান শহরগুলোর বায়ু মান উন্নয়নে একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

প্রথম প্রকল্প হিসেবে ‘এনার্জি সেক্টর সিকিউরিটি এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট’-এ ৩৫০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে পেট্রোবাংলা। এর মাধ্যমে সাশ্রয়ী অর্থায়নের সুযোগ তৈরি করে আগামী সাত বছরে ২.১ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বেসরকারি বিনিয়োগ সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে, যা ব্যবহার হবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে।

বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং প্রকল্পটির টিম লিডার ওলাঙ্কা বিসিরিয়ু ইডেবিরি বলেন, এই প্রকল্প বাংলাদেশকে নিরবচ্ছিন্ন, নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে, যা শিল্প এবং গার্হস্থ্য খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমানে দেশের মোট গ্যাসের প্রায় ২৫ শতাংশ এলএনজি আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়, যার মধ্যে ৪২ শতাংশ বিদ্যুৎ খাতে ব্যবহৃত হয়। এলএনজি সরবরাহে ঘাটতির কারণে ঘন ঘন লোডশেডিং ও শিল্প উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটে। প্রকল্পটি দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি আমদানিচুক্তির আওতায় অর্থ প্রদানের নিরাপত্তা ও কার্যকর মূলধন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলবে। ফলে ব্যয়বহুল স্পট মার্কেট আমদানির ওপর নির্ভরতা কমে আসবে।

আরও পড়ুন: ভ্যাট-আয়কর-শুল্কে এনবিআরের আয় ৩.২৭ লাখ কোটি

দ্বিতীয় প্রকল্প ‘বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রজেক্ট’-এ ২৯০ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বায়ু দূষণের ভয়াবহতা মোকাবিলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় অন্যতম, যেখানে বার্ষিক ফাইন পার্টিকুলেট ম্যাটার এর মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনার চেয়ে ১৮ গুণ বেশি। এই প্রকল্পে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হবে:

  • নতুন ও উন্নত বায়ু পর্যবেক্ষণ স্টেশন স্থাপন
  • রিয়েল-টাইম ইন্ডাস্ট্রিয়াল এমিশন মনিটরিং চালু
  • ৪০০টি পুরোনো ডিজেলচালিত বাসের বদলে শূন্য-নির্গমন ইলেকট্রিক বাস চালু
  • ৫টি নতুন যানবাহন পরিদর্শন কেন্দ্র নির্মাণ
  • ২০টি মোবাইল নির্গমন পরীক্ষাকেন্দ্র মোতায়েন

বিশ্বব্যাংকের প্রধান পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এবং প্রকল্পটির টিম লিডার আনা লুইসা গোমস লিমা বলেন, এটি দেশের বায়ু মান উন্নয়নের প্রথম বড় প্রকল্প। যেহেতু বাতাস সীমানা মানে না, তাই এই প্রকল্প আঞ্চলিক সংলাপ ও তথ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রেও নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।

এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে বছরে প্রায় ২ হাজার ৭৩৪ মেট্রিক টন ফাইন পার্টিকুলেট ম্যাটার নির্গমন হ্রাস পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংক স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে অন্যতম প্রধান উন্নয়ন অংশীদার। সংস্থাটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে ৪৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান ও স্বল্পসুদে ঋণ দিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ আইডিএ’র বৃহত্তম সহায়তা প্রাপক দেশগুলোর একটি।

বিশ্বব্যাংকের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা এবং পরিষ্কার বায়ু অপরিহার্য। এই প্রকল্পগুলো কর্মসংস্থান বাড়ানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

দুটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের জ্বালানি নির্ভরযোগ্যতা ও পরিবেশগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে, যা উৎপাদনশীলতা, বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে নতুন গতি দেবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়