বেহায়া জাতি, নির্লজ্জ রাজনীতি: স্ট্যাটাসে ঝড় তুললেন ফারিয়া

ছবি: সংগৃহীত
ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন।
বুধবার (১৮ জুন) সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তিনি জানান, দেশের রাজনীতি নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করবেন না। এই ঘোষণার পাশাপাশি তিনি নিজের অভিজ্ঞতা, ব্যক্তিগত উপলব্ধি এবং সাম্প্রতিক আন্দোলনের সময় ঘটে যাওয়া কিছু অপ্রকাশিত তথ্যও প্রকাশ করেছেন।
ফারিয়া লিখেছেন, এই পোস্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের পলিটিক্স নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়া বন্ধ করলাম। কারণ ফাইনালি আমি বুঝে গেছি, জাতি হিসেবে আমরা অত্যন্ত বেহায়া এবং নির্লজ্জ। আমরা কক্ষনো ভালো হবো না।
তিনি আরও বলেন, যত আন্দোলন হোক, সরকার পরিবর্তন হোক, যতই শান্তিতে নোবেল পাওয়া মানুষ আসুক, আমাদের কেউ দুর্নীতি এবং চুরি করা থেকে আটকাতে পারবে না। শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ – যেই ক্ষমতা পাবে, সেই তার অসৎ ব্যবহার করবে। আমি আর আমার দেশের কাছে কোনো প্রত্যাশা রাখি না।
স্ট্যাটাসে শবনম ফারিয়া ২০২৫ সালের জুন-জুলাই মাসের ছাত্র আন্দোলনের সময়কার এক অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন।
তিনি লিখেছেন, জুন মাসে যখন আন্দোলন তুঙ্গে, ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার পরে যেসব সেলিব্রেটিদের কাছে মেট্রোরেল/বিটিভিতে আগুন দেওয়ার প্রতিবাদ করতে ভিডিও বানাতে বলা হয়, আমিও তাদের মধ্যে একজন।
ফারিয়া জানান, তখন তিনি সরাসরি ‘না’ বলতে সাহস পাননি। তাই প্রথমে সময় চান এবং সিয়াম আহমেদকে মেসেজ পাঠান, ‘তুমি কি কল পেয়েছো?’ সিয়াম জানায়, হ্যাঁ, সে পেয়েছে এবং না করে দিয়েছে। এরপর সাহস করে তিনিও প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন।
আরও পড়ুন: গান বাংলা টিভির নির্বাহী তাপস জামিনে মুক্ত
তিনি লেখেন, এইসব কথা অযথা বলে বেড়ানোর কোন ইচ্ছা আমার ছিল না। সেসময় এটাই করার কথা ছিল। না বলেছি বলে আমি কোনো বিশেষ ক্রেডিটও নিতে চাই না। কারণ আমি রাজনীতির সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নই।
সম্প্রতি কিছু অনলাইন প্রচার বা মন্তব্যে তাকে নিয়ে ‘ডলার খাওয়ার’ অভিযোগ ওঠে। সেই কল্পিত প্রচারণার প্রেক্ষিতে তিনি লিখেছেন, তাও যখন দেখি কেউ লেখে ‘এরা তো ডলার খাইছে’ মার্কা কল্পনিক গল্প, হাসা ছাড়া কিছু করার থাকে না।
তিনি ব্যঙ্গ করে বলেন, সত্যি সত্যি ডলার পেলে আসলে ভালোই লাগতো। শ্রীলঙ্কা যাওয়ার আগে ২৫,৩০০ টাকা দিয়ে ২০০ ডলার পাসপোর্টে এন্ডোর্স করতে খুবই কষ্ট হইছে।
ফারিয়া তার স্ট্যাটাসে একটি চেনা গল্প উল্লেখ করেছেন – শীতের সকালে একজন ইমাম আর একজন চোরের কথা। ইমাম ভাবে, কী ভালো একজন মানুষ এই ঠান্ডায় নামাজ পড়তে এসেছে! আর চোর ভাবে, কী ভদ্রলোক, দাড়ি রেখে আবার চুরি করে!
এই গল্পের ব্যাখ্যায় তিনি লিখেন, যে যেমন চিন্তা করে, অন্যদেরও তারা তেমনই ভাবে। কিন্তু পৃথিবীর সব মানুষ টাকার (ডলারও পড়তে পারেন) কাছে তাদের এথিক্স বিক্রি করে না। দুনিয়ার সব মানুষের কাছে টাকাই সব না। মানুষ স্রোতের বিপরীতেও যায়, রিস্ক নেয়।
শবনম ফারিয়া বলেন, আমি এমন অনেক মানুষকে চিনি যারা মন থেকে আওয়ামী লীগকে ভালোবাসে, কিন্তু জুলাইতে তারা লাল ডিপি দিয়েছিল। কারণ, সেই সময় বিষয়গুলো ভিন্নভাবে পোট্রে করা হয়েছিল। আপনি যদি মানুষ হয়ে থাকেন, অমানুষ না হন, তাহলে আপনি কোনো মানুষকে হত্যা করার প্রতিবাদ না করে থাকতে পারেন না – আপনার রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক না কেন।
শবনম ফারিয়াকে বরাবরই স্পষ্টভাষী হিসেবে দেখা গেছে। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে নিজের অবস্থান প্রকাশ করতে কখনোই পিছপা হননি তিনি। তবে এবার, দীর্ঘ ক্ষোভ, হতাশা ও ভেতরের চাপাচাপির পর তিনি একরকম চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন — আর নয়।
স্ট্যাটাসের শেষে তিনি বলেন, আমি আর আমার নিজ দেশের কাছে আর কোনো এক্সপেকটেশন রাখি না।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি