যশোরে অমিক্রোনে ১২ ঘণ্টায় ২জনের মৃত্যু, ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক

প্রতীকী ছবি
যশোরে নতুন ধরনের অমিক্রন করোনা ভাইরাসের সাব-ভ্যারিয়েন্ট বা নতুন ধরণের LF.7, XFG, JN.1 এবং NB.1.8.1 আক্রান্ত হয়ে গত ১২ ঘণ্টায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার (১৮ই জুন) ভোরে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার জহুরপুর গ্রামের মৃত শেখ মকছেদ আলীর ছেলে শেখ আমির হোসেনের মৃত্যু হয়। একই দিনে দিবা গত রাত সাড়ে এগারোটার দিকে জেলার মনিরামপুর উপজেলার মাহমুদকাটি গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে ইউসুফ আলীর (৪৫) মৃত্যু হয়েছে। দুজনই যশোর জেনারেল হাসপাতালের আইসিউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে ওই রোগীদের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে করোনা শনাক্ত হয়। এ পর্যন্ত হাসপাতালটিতে তিনজন করোনা রোগী ভর্তি ছিলেন। তার মধ্যে দুজনেরই মৃত্যু হয়েছে।
নিশ্চিত করেছেন আইসিইউ বিভাগের ইনচার্জ ডা. রবিউল ইসলাম তুহিন। এই স্বল্প সময়ে হাসপাতালে দুইজন করোনায় আক্রান্ত হওয়া রোগীর মৃত্যুতে যশোরে করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
করোনায় মৃত্যু আমির হোসেনের ছেলে বাবু বলেন,সরকারি হাসপাতালে সরকার করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দায় দেয়। অথচ এখানে ভালো চিকিৎসা বা রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালে করোনা শনাক্তের ব্যবস্থা থাকলে আগেভাগেই রোগ সনাক্ত করা সম্ভব হত। আগেভাগে রোগ শনাক্ত সম্ভব হলে তার বাবাকে সঠিক চিকিৎসা দিয়ে বাঁচানো যেত। সর্বশেষে ডাক্তাররা বাইরে থেকে করোনা পরীক্ষা করতে বলেন। এরপর বাবার করোনা আক্রান্তের বিষয়টি ধরা পড়ে। পরপরই তাকে আইসিউতে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল তার মৃত্যু হয়।
করোনায় মৃত্যু ইউসুফ আলীর পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও ঠিক মত সেবা পাওয়া যায়নি। সারাদিনে একবার চিকিৎসক কোনরকম ঘুরে চলে যায়। এরপর সবকিছু করেন নার্সরা। নার্সদের কোন বিষয়ে জানালে তারা রোগীদের ও তাদের পরিবারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এমনিতেই হাসপাতালে ঠিকঠাক মত চিকিৎসা দেওয়া হয় না। তারপরে করোনা সনাক্তের খবর পেলে কোন নার্স বা ডাক্তার রোগীর নিকটও যায় না।
হাসপাতালের কয়েকটি সূত্র বলছে, সরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে হাসপাতালের সামনে বেশ কয়েকটি ক্লিনিক মালিকদের নিবিড় সখ্যতা রয়েছে। হাসপাতালে এসব পরীক্ষা না করে কৌশলে বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠানো হয়। সেখান থেকে হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বিশেষ সুবিধা পায়। যে কারণে সরকারী হাসপাতালটিতে বিপুল অংকের অর্থ বরাদ্দ ও যন্ত্রাংশ থাকলেও সেগুলোর পর্যাপ্ত ব্যবহার করা হয় না। ফলে নিরুপায় হয়ে হাসপাতালে রোগীরা দিনের শেষে সেসব বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে রোগ নির্ণয়ের জন্য যেত হয়। তাছাড়া হাসপাতালে প্রতিদিন ৩০ জনের বেশি রোগীর রোগ শনাক্ত করা হয় না। বিকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আবার হাসপাতাল টিতেই ব্যবসায়িক কেন্দ্র খুলে বসেছে। সে সময়ে চিকিৎসা সেবা পেতে গেলে ক্লিনিকের মত উচ্চমূল্যে ফি ও রোগ নির্ণয়ের টাকা প্রদান করতে হয়। সরকারি হাসপাতালটি ব্যবসায়ীক কেন্দ্রে পরিণত করেছে।
এদিকে, যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল সহ যশোরের সরকারি হাসপাতালগুলোতে করানো সনাক্তের কীট ও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক, স্যানিটাইজার উপাদান না থাকায় তারা নিজেরাই শংকিত। এই অঞ্চলে করোনাভাইরাস আবার মহামারী রূপে ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালে পক্ষে সেবা দান করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোঃ ডা: হুসাইন সাফায়াত।
তিনি বলেন, আমি ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস সনাক্তের জন্য ৫ হাজারের মত কিটের চাহিদা দিয়েছিলাম। অধিদপ্তর থেকে দুই হাজার কিট পাঠিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে হাসপাতালে ভর্তিরত গুরুত্বপূর্ণ রোগীদের এসব কিট দিয়ে শনিবার থেকে করোনা সনাক্তে পরীক্ষা করা হবে। তাছাড়া হাসপাতালে হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক, স্যানিটাইজার সরবরাহ না থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসক ও সেবিকারা শঙ্কায় রয়েছেন। করোনাভাইরাস বৃদ্ধি পাওয়াতে হাসপাতালের আইসিইউ প্রস্তুত করা হয়েছে। হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের অবহেলা ও অনিয়ম নিয়ে কেউ অভিযোগ করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
যশোরের সিভিল সার্জন মোঃ: মাসুদ রানা বলেন, এটি করোনা ভাইরাসের নতুন রূপ। যশোর ৮টি উপজেলা ও বেনাপোল ইমিগ্রেশনে ইতিমধ্যে করোনা শনাক্ত কিটের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাব। এরপরে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বেশি নজর দিয়ে সেগুলোতে কাজ করা হবে। তাছাড়া করোনায় আতঙ্ক না হয়ে, সবাইকে সচেতন হয়ে নিয়মিত মুখে মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি