‘আন্তর্জাতিক ব্যর্থতা রোহিঙ্গা সংকটকে ঘনীভূত করেছে’

ছবি: সংগৃহীত
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
‘আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার উপর দারিদ্র্য, উন্নয়নঘাটতি ও সংঘাতের প্রভাব’ শীর্ষক এই বৈঠকে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধান না হলে, এই সংকট দ্রুতই আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকিতে পরিণত হতে পারে।
তিনি বলেন, গত আট বছরেরও বেশি সময় ধরে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়ে আসছে। এটি এখন আর কেবল একটি মানবিক সংকট নয়— এটি অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং ক্রমবর্ধমানভাবে একটি নিরাপত্তাজনিত ইস্যুতে রূপ নিচ্ছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে বাস্তুচ্যুত এই জনগোষ্ঠীকে নিরাপত্তা ও অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়ে স্বদেশে প্রত্যাবাসনের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, এই দীর্ঘসূত্রতা শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো অঞ্চলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। নিরাপদ, সম্মানজনক ও টেকসই প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা না করলে, এই সংকট আরও বহুমাত্রিক সমস্যার জন্ম দিতে পারে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে তরুণদের অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং সাম্প্রতিক 'জুলাই বিপ্লব'— সব ক্ষেত্রেই তরুণরা পরিবর্তনের অগ্রভাগে ছিল।
তবে সতর্ক করে তিনি বলেন, যদি তরুণরা শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়, তবে তারা সহজেই চরমপন্থায় জড়িয়ে পড়তে পারে। দারিদ্র্য, বৈষম্য ও উন্নয়নঘাটতি দীর্ঘমেয়াদে সহিংসতা ও অস্থিরতায় রূপ নিতে পারে।
আরও পড়ুন: বাধ্যতামূলক অবসরে ৫ সচিবসহ ছয় কর্মকর্তা
বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সমন্বিত লড়াইয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা এমন এক ভবিষ্যৎ চাই, যেখানে থাকবে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ।
এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে উন্নয়ন ও শান্তিবিনির্মাণ প্রচেষ্টাগুলোকে একসূত্রে সংযুক্ত করতে হবে বলে মত দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন এবং পিসবিল্ডিং কমিশন— এই তিন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে, যাতে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগগুলো বাস্তবভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
সামাজিক ব্যবসার গুরুত্ব ও ইউনূসের ‘তিন শূন্য’ দর্শন
অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস প্রবর্তিত ‘সামাজিক ব্যবসা’ মডেল তুলে ধরেন তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, এটি দারিদ্র্য বিমোচন ও সংঘাত প্রতিরোধে একটি কার্যকর মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে।
তিনি ইউনূসের ‘তিন শূন্য’ নীতির প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনে আমাদের প্রয়োজন শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ— যা অর্জনে ‘সামাজিক ব্যবসা’ হতে পারে অন্যতম হাতিয়ার।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে একটি ন্যায়ভিত্তিক, শান্তিপূর্ণ ও টেকসই বিশ্ব গঠনে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সুইডেন, উরুগুয়ে ও পূর্ব তিমুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জার্মানির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, অন্যান্য রাষ্ট্র ও সংস্থার প্রতিনিধিরা।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি