ইরান প্রশ্নে ট্রাম্পের সময়সীমা ২ সপ্তাহ

ছবি: সংগৃহীত
ইরানের আরাক শহরের খোনদাব পারমাণবিক কেন্দ্রে ইসরায়েলের প্রথম বিমান হামলার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে শুরু হয় উত্তেজনা।
১৩ জুন, শুক্রবার ইরানের নাতাঞ্জ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাও টার্গেট করা হয়। এর মাধ্যমে শুরু হয় টানা সাতদিনের হামলা-পাল্টা হামলার চক্র।
ইসরায়েল দাবি করে, তারা ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো ধ্বংস করতে অভিযান শুরু করেছে। যদিও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) জানায়, খোনদাবে ব্যবহৃত চুল্লিতে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছিল না। ইরান হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন আখ্যা দেয়।
শুক্রবার (২০ জুন) পর্যন্ত সংঘর্ষে ইরানে নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস দাবি করেছে, ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৩৯ জন নিহত হয়েছেন; অন্যদিকে, ইরানি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে নিহত ২২৪ ও আহত ১,২৭৭ জন।
এদিন সকালে ইসরায়েলের বিরসেবা শহরের সোরোকা মেডিকেল সেন্টারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।
যদিও আইআরজিসি দাবি করে, তাদের লক্ষ্য ছিল হাসপাতালের পাশের সামরিক গোয়েন্দা কার্যালয়। এতে হাসপাতালে ৭১ জন আহত হন। একইদিনে তেল আবিবের রামাত গান এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়, যা লিথুয়ানিয়ার দূতাবাসের মাত্র ২০০ মিটার দূরে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই সংঘাতে জড়াবে কি না এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্তভাবে ঘোষণা দেননি দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
১৯ জুন হোয়াইট হাউজ প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট জানান, আমরা ইরানের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ তৈরি হতে পারে বলে বিশ্বাস করি, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রেসিডেন্ট সিদ্ধান্ত নেবেন।
ট্রাম্প ‘কৌশলগত অনিশ্চয়তা’র নীতি অনুসরণ করছেন।
তিনি বলেন, আমি হয়তো করব, হয়তো করব না।
আরও পড়ুন: মধ্যপ্রাচ্যের ঘাঁটি থেকে বিমান ও জাহাজ সরিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
তবে তিনি ইতোমধ্যেই ইরানে সামরিক হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়েছেন বলে দাবি করেছে সিবিএস ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। সম্ভাব্য লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনায় রয়েছে ইরানের ফোর্দো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, যা পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত এবং খুবই সুরক্ষিত। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের মজুত ভারী বোমাই তা ধ্বংসে সক্ষম।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক টুলসি গ্যাবার্ড কংগ্রেসে জানিয়েছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো তৎপরতা চালাচ্ছে না। তবে ট্রাম্প প্রশাসন সেই মূল্যায়ন প্রত্যাখ্যান করেছে। হোয়াইট হাউজ এখনো নিশ্চিত নয়, কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া হামলা চালানো হবে কি না।
তবুও কূটনৈতিক চেষ্টাও চলছে। মার্কিন মধ্যস্থতাকারী স্টিভ উইটকফ ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির মধ্যে ফোনালাপ হয়েছে।
ইসরায়েলের সাবেক উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী মেইর মাসরি এক্সে (টুইটার) লিখেন, ইরানের পর পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির দিকেও মনোযোগ দেওয়া হতে পারে।
তিনি পাকিস্তানকে সরাসরি সতর্ক করেন। এর জবাবে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার কড়া বার্তা দিয়ে বলেন, ইসরায়েল যেন পাকিস্তানের দিকে চোখ তুলে না তাকায়। আমরা প্রস্তুত।
ইরান, রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান ও আলজেরিয়ার অনুরোধে ২১ জুন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আলোচনার মূল লক্ষ্য, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি শান্ত করা ও যুদ্ধ এড়ানো।
এই মুহূর্তে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তমুখী সময়সীমা বেঁধে দেওয়া এবং সরাসরি জড়ানোর দ্বিধা—গোটা মধ্যপ্রাচ্যে অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা যেমন বাড়ছে, তেমনি পশ্চিমা জোটের মধ্যেও মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র জড়ায়, তাহলে এটি কেবল ইরান-ইসরায়েলের দ্বিপাক্ষিক যুদ্ধ থাকবে না, বরং রূপ নিতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনায়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি