পরাজয় মানতে মানসিক প্রস্তুতি আছে ট্রাম্পের?

নির্বাচনে জয়ী হওয়ার স্বপ্ন একটু একটু করে মিলিয়ে গেলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে পরাজয় মেনে নেওয়ার বিন্দুমাত্র প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে না।
শুক্রবার দেওয়া তার বিবৃতিতে ভোট নিয়ে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পরিকল্পনার কথাও জানানো হয়েছে।
হোয়াইট হাউস ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা মনে স্থান না দেওয়া প্রেসিডেন্টের এই ‘গোয়ার্তুমি’ ছাড়িয়ে তাকে বাস্তব পরিস্থিতি বোঝাতে পারবে, ট্রাম্পের আশপাশের অনেকেই এখন এমন ‘একজনের’ খোঁজ করছে বলে জানিয়েছে সিএনএন।
বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গুরুত্বপূর্ণ ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ গুলোতে মার্কিন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছ থেকে ক্রমশ পিছিয়ে পড়লেও ট্রাম্প এখনও পরাজয় মেনে নেওয়ার বক্তৃতা প্রস্তুত করেননি।
কেবল তাই নয়, গত কয়েকদিন ধরে তিনি তার মিত্রদের সঙ্গে আলোচনাতেও নির্বাচনে পরাজয় মেনে নেওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই বলে জানিয়েছেন।
এখন পর্যন্ত তিনি তার জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা এবং প্রাপ্তবয়স্ক দুই ছেলেসহ সবচেয়ে কাছের লোকদের পরামর্শে ভোটে জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে অবস্থান আরও দৃঢ় করেছেন। ডনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র ও ওই উপদেষ্টারা আদালতে ভোটের ফল চ্যালেঞ্জ করতে আগ্রাসী চেষ্টা চালাচ্ছেন এবং অন্যান্য রিপাবলিকানদেরকে ট্রাম্পের পক্ষ নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন।
সিএনএন জানিয়েছে, চিফ অব স্টাফ মার্ক মিডৌসসহ ট্রাম্পের শীর্ষ উপদেষ্টারা প্রেসিডেন্টকে বাস্তব পরিস্থিতি না বুঝিয়ে উল্টো তার হাতের মুঠো থেকে নির্বাচন চুরি করে নিয়ে যাওয়ার ভিত্তিহীন অভিযোগকে আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রিপাবলিকান প্রার্থীর মন যুগিয়ে চলছেন।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্র সময় ভোরের আগে আগে সর্বশেষ জনসম্মুখে আসা ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও ট্রাম্পের আইনি লড়াইয়ের জন্য অর্থ যোগাড়ে নেমে প্রেসিডেন্টকে শান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
শুক্রবার সকালে ক্ষুব্ধ ও হতাশ ট্রাম্প টেলিভিশন দেখতে দেখতে তার পক্ষে খুব বেশি মানুষকে না দেখে আরও মুষড়ে পড়েন বলে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি।
সেদিন বিকালে দেওয়া লিখিত বিবৃতিতে ট্রাম্প আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন।
“এটা আর কেবল একটি একক নির্বাচনের বিষয় নয়। এটা আমাদের সমগ্র নির্বাচনী প্রক্রিয়ার শুদ্ধতার বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ যেন আমাদের সরকারের উপর আস্থা পায় তা নিশ্চিত করতে আমরা এই প্রক্রিয়াকে আইনের যতগুলো দিক আছে সবগুলোর ভেতর দিয়ে নিয়ে যাবো,” বলেছেন তিনি।
ট্রাম্প পরাজয় মেনে নিলে ১৯৮৮ ও ২০০৮ সালে দুই দফা হোয়াইট হাউসের দৌড় থেকে ছিটকে পড়া ৭৭ বছর বয়সী বাইডেনই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রেসিডেন্ট।
এখন পর্যন্ত ফল নির্ধারিত না হওয়া দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে ডেমোক্র্যাট এ প্রার্থী তার প্রতিদ্বন্দ্বির তুলনায় এগিয়ে আছেন। সব ভোট গণনা শেষে ২-১ দিনের ভেতর তার জয় নিশ্চিত হয়ে গেলে সোমবার থেকেই তার নির্ধারিত দলের সদস্যরা ট্রাম্পের হাত থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রক্রিয়া শুরু করবেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।
ডেলওয়ারে থাকা বাইডেনের নিরাপত্তা জোরদারে এরইমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো উদ্যোগী হয়েছে। উইলমিংটনের আকাশে বিমান চলাচল সীমিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থাও নিয়েছে। যদিও ট্রাম্পের দিক থেকে শিগগিরই পরাজয় মেনে নেওয়ার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
“জো বাইডেন অন্যায়ভাবে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় দাবি করতে পারেন না। আমিও একই রকম দাবি করতে পারি। আইনি প্রক্রিয়া কেবলই শুরু হল,” শুক্রবার বিকালে টুইটারে এমনটাই বলেছেন জানুয়ারি, ২০১৭ থেকে হোয়াইট হাউসে থাকা ট্রাম্প।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন থেকেই প্রমাণ ছাড়াই ভোটে কারচুপির অভিযোগ করে আসছেন। তার দেখাদেখি অনেক রিপাবলিকানও এ বিষয়ে উঁচু গলায় আওয়াজ তুললেও দিন দিন তাদের স্বর ক্ষীণ হয়ে আসছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
শুক্রবার টেলিভিশন দেখার পাশাপাশি ট্রাম্প তার বিভিন্ন নির্বাচনী কার্যালয়ে ফোন করেছেন বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা। এদিন তিনি ওভাল কার্যালয় ও বাসভবনে সময় কাটিয়েছেন।
এদিন তার অনেক উপদেষ্টাকেই অফিস করতে দেখা যায়নি; পুরো হোয়াইট হাউসের মানসিক অবস্থা ছিল ‘মন খারাপের’।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি