অর্থ পাচারে জড়িতদের সঙ্গে সমঝোতার ইঙ্গিত সরকারের

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ছবি: সংগৃহীত
বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত ধনকুবেরদের সঙ্গে আর্থিক সমঝোতায় পৌঁছানোর সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ। শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দেশের অর্থ পুনরুদ্ধারে একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
ব্রিটিশ প্রভাবশালী দৈনিক ফিনান্সিয়াল টাইমস–কে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর মামলাগুলোর ক্ষেত্রে ‘সমঝোতা একটি গ্রহণযোগ্য বিকল্প’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
গভর্নর মনসুর জানান, ১৫ বছরব্যাপী শেখ হাসিনার শাসনামলে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যেসব অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে, তার তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ার ব্যয় নির্বাহে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক লিটিগেশন ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে কাজ করছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশে প্রকাশিত একটি অর্থনৈতিক শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনার সরকার আমলে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। এই বিশাল পরিমাণ অর্থ বিভিন্ন ভুয়া ঋণ, অবকাঠামো প্রকল্পে দুর্নীতি ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করছে বর্তমান প্রশাসন।
ড. মনসুর বলেন, যেসব ক্ষেত্রে অপরাধের প্রকৃতি তুলনামূলকভাবে লঘু, সেখানে আমরা ফৌজদারি মামলার পরিবর্তে দেওয়ানি মামলা করব এবং আর্থিক সমঝোতা সেই প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারে।
বর্তমান সরকার শেখ হাসিনার পরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ও সাবেক ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্তত ১১টি প্রভাবশালী পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে কয়েকটি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে পাচার হওয়া সম্পদ শনাক্ত ও ফিরিয়ে আনার জন্য সমন্বিত অভিযান চলছে।
আরও পড়ুন: ১২ কর ছাড় একসঙ্গে বাতিল: বদলে যাচ্ছে করচিত্র
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এই সপ্তাহেই যুক্তরাজ্য সফরে গেছেন। সফরকালে ব্রিটিশ সরকারের কাছে অর্থ ফেরতের জন্য ‘আইনি ও নৈতিকভাবে’ আরও জোরালো সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।
লন্ডনের একটি অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস বলেন, এটা চুরি হওয়া অর্থ। যুক্তরাজ্য সরকারের উচিত এই অর্থ শনাক্ত ও ফেরতের প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা।
অর্থ পুনরুদ্ধারে সহায়তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মামলাভিত্তিক অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক ওমনি ব্রিজওয়ে নামের একটি প্রভাবশালী লিটিগেশন ফান্ডার চলতি বছরের প্রথমার্ধে ঢাকায় সফর করে গভর্নর মনসুরসহ ১৬টিরও বেশি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে।
ওমনি ব্রিজওয়ের এনফোর্সমেন্ট বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উইগার উইলিঙ্গা বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংক খাতকে সহায়তা করতে এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ও খেলাপি ঋণের পুনরুদ্ধারে আমরা বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনায় গভীর আগ্রহী।
ড. মনসুর আরও জানান, আমরা লিটিগেশন ফান্ডিংয়ের সম্ভাবনা যাচাই করছি এবং বেশ কিছু উৎস থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। আমাদের লক্ষ্য, মামলার ব্যয় যতটা সম্ভব এসব উৎস থেকেই সংগ্রহ করা।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগপন্থী বিশ্লেষক ও সমর্থকরা এই অভিযানকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে আখ্যা দিয়েছেন। তারা বলছেন, এই উদ্যোগে নিরপেক্ষতা রক্ষা করা হচ্ছে না এবং তা মূলত পূর্ববর্তী সরকারের নেতাদের দুর্নাম রটানোর উদ্দেশ্যে পরিচালিত।
তবে বর্তমান সরকার বলছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নয়, বরং দুর্নীতির উৎস নির্মূল ও জনগণের সম্পদ ফিরিয়ে আনার জন্যই এ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি