তেলের দাম বাড়ানোর কোনও পরিকল্পনা নেই: জ্বালানি উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত
ইরান-ইসরায়েল চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি নজরে রাখলেও বাংলাদেশে আপাতত জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কোনও পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবির খান।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে অনুষ্ঠিত একটি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এদিন লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ পিএলসি এবং জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমস লিমিটেড-এর মধ্যে ১০ বছর মেয়াদি গ্যাস সরবরাহ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
উপদেষ্টা ড. ফাওজুল বলেন, যুদ্ধের মধ্যেই একটি তেলের জাহাজ বন্দরে এসেছে। আমাদের হাতে পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। সোর্স মধ্যপ্রাচ্য হলেও বিভিন্ন উৎস থেকে সরবরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে—কেউ সিঙ্গাপুর, কেউ মালয়েশিয়া থেকে এনে দেয়। ফলে সরবরাহ নিয়ে আশঙ্কা নেই।
তিনি আরও বলেন, তেলের দাম বাড়ানো হবে না। বিশ্ববাজারে কিছুটা দাম বেড়েছে ঠিকই, তবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)-এর মুনাফা ও কুশন ফান্ড থেকে প্রয়োজনীয় ঘাটতি সমন্বয় করা হবে। ভর্তুকিও বাড়বে না।
প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আরও বলেন, গ্যাস খাতে অনেক ভর্তুকি আমরা দিচ্ছি। এখন আর নতুন করে ভর্তুকি বাড়ানো সম্ভব না। আমাদের হাতে কিছু কৌশলগত অর্থ রয়েছে। প্রয়োজনে সেখান থেকেই সমন্বয় করা হবে।
তিনি জানান, গ্যাস সরবরাহের বিদ্যমান কাঠামোয়ও পর্যালোচনা চলছে। কাফকো’র সঙ্গে থাকা গ্যাস সরবরাহ চুক্তিও পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে এবং বাজার মূল্যে গ্যাস প্রদানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এদিন অনুষ্ঠানে লাফার্জহোলসিম-এর সঙ্গে নবায়িত ১০ বছর মেয়াদি গ্যাস সরবরাহ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার আওতায় দৈনিক ১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। চুক্তি অনুযায়ী এবার থেকে বাংলাদেশ জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিইআরসি)-এর ঘোষিত গ্যাসমূল্যের ফর্মুলা অনুযায়ী বিল আদায় হবে।
পূর্ববর্তী ২০০৩ সালের ২০ বছর মেয়াদি চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই চুক্তি নবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আগের নির্ধারিত দামের জায়গায় এবার চলতি বাজারদর বিবেচনায় বিইআরসি ঘোষিত ৪০ টাকা (শিল্প) এবং ৪২ টাকা (ক্যাপটিভ) প্রতি ঘনমিটার দরে গ্যাস সরবরাহের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
তিনি বলেন, লাফার্জ হচ্ছে গ্লোবাল লিডার। তাদের সঙ্গে চুক্তি আমাদের জন্য বার্তা—বাংলাদেশ এখনো বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ ও আকর্ষণীয় জায়গা।
অনুষ্ঠানে অংশ নেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইস রাষ্ট্রদূত রেতো সিজফ্রিয়েড রেঙ্গলি, ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল মারিয়া সিস্তিয়াগা ওচোয়া ডি চিনচেত্রু।
রাষ্ট্রদূত রেঙ্গলি বলেন, আমি বিশ্বাস করি এই চুক্তি প্রযুক্তি হস্তান্তর ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, বাংলাদেশ সম্প্রতি নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা প্রকাশ করেছে, যা খুবই আশাব্যঞ্জক। আমরা এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে চাই।
লাফার্জ (প্যারিস) ও হোলসিম (সুইজারল্যান্ড) ২০১৪ সালে একীভূত হয়ে লাফার্জহোলসিম নাম গ্রহণ করে। বর্তমানে কোম্পানিটির কার্যক্রম ৭০টি দেশে বিস্তৃত।
বাংলাদেশে ছাতকে তাদের প্রধান কারখানার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে দুটি ও খুলনার মোংলায় একটি গ্রাইন্ডিং স্টেশন রয়েছে। কোম্পানিটি কেবল সিমেন্ট বা ক্লিংকার নয়, দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে বলে জানান কোম্পানির সিইও ইকবাল চৌধুরী।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি