কী আছে ইরানের সেই ৩ পারমাণবিক স্থাপনায়?

ছবি: ইন্টারনেট
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রবেশ করার পরপরই ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
হামলা চালানো তিন গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দগুলো হলো- নাতাঞ্জ, ফর্দো ও ইস্পাহান। চলুন জেনে নেয়া যাক কী আছে সেসব পারমাণবিক কেন্দ্রে।
ফর্দো
কওম নামের একটি শহরের কাছাকাছি অবস্থিত এই স্থাপনাটি সম্পর্কে এখনো অনেক তথ্য অজানা। পাহাড়ের গভীরে নির্মিত একটি সুরক্ষিত ও গোপন স্থাপনা আছে এখানে।
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থার (আএইএ) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফর্দোতেও ইরান ৬০ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে। এখানে বর্তমানে প্রায় ২ হাজার ৭০০টি সেন্ট্রিফিউজ রয়েছে।
ইসরায়েলি গোয়েন্দারা কয়েক বছর আগে ইরান থেকে যেসব গোপন নথি চুরি করেছিল, তার মাধ্যমেই মূলত এই সাইট সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা গেছে।
মূল কক্ষগুলো মাটির ৮০ থেকে ৯০ মিটার গভীরে অবস্থিত। বিমান হামলা করে একে ধ্বংস করা খুবই কঠিন। আগের বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, কেবল যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই এত গভীরে আঘাত হানার মতো বোমা রয়েছে। যদিও বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেছেন, সেগুলো দিয়ে এই সাইট ধ্বংস না–ও হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আরেক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি (আইএসআইএস) বলেছে, ‘ফর্দো ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট’-এ ৬০ শতাংশ ইউরেনিয়ামকে ২৩৩ কেজি অস্ত্র-মানের ইউরেনিয়ামে রূপান্তর করতে ইরানের মাত্র তিন সপ্তাহ লাগতে পারে। এটি দিয়ে ৯টি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি সম্ভব।
নাতাঞ্জ
ইসরায়েলের প্রথম হামলায় এই পারমাণবিক কেন্দ্রটি লক্ষ্যবস্তু ছিল। স্যাটেলাইট ছবি ও বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নাতাঞ্জের ‘পাইলট ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট’–এর উপরিভাগ ধ্বংস হয়ে গেছে।
এই কেন্দ্র ২০০৩ সাল থেকে চালু রয়েছে। ইরান এখানে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছিল বলে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে। উল্লেখ্য, অস্ত্র তৈরির উপযোগী ইউরেনিয়ামকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক সংগঠন নিউক্লিয়ার থ্রেট ইনিশিয়েটিভ (এনটিআই) অনুযায়ী, নাতাঞ্জে ছয়টি ভূ–উপরিস্থ ভবন এবং তিনটি ভূগর্ভস্থ স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে ২টি স্থাপনায় ৫০ হাজার সেন্ট্রিফিউজ রাখার ক্ষমতা রয়েছে।
ইসরায়েলের হামলার সময় দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, ওই হামলায় নিচের স্তরে যেখানে সেন্ট্রিফিউজ রাখা হয়, সেখানকার বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগেই পারমাণবিক উপকরণ সরিয়ে নিয়েছিল ইরান
ইস্পাহান
এই কেন্দ্রে চীনের সরবরাহ করা তিনটি ছোট গবেষণা চুল্লি চালু রয়েছে। সেই সঙ্গে এখানে একটি কনভার্সন ফ্যাসিলিটি (পরিবর্তন কেন্দ্র), একটি জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্র, একটি জিরকোনিয়াম ক্ল্যাডিং কারখানা এবং আরও কিছু প্রযুক্তি স্থাপনা ও গবেষণাগার রয়েছে বলে জানিয়েছে এনটিআই।
ইরানের ইস্পাহানে একটি পারমাণবিক স্থাপনার চিত্র। এই এলাকায় রয়েছে ইরানের সামরিক বাহিনীর বেশ কয়েকটি ঘাঁটি।
ইস্পাহান ইরানের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত। এটিই দেশটির সবচেয়ে বড় পারমাণবিক গবেষণা কমপ্লেক্স।
এনটিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই স্থাপনা চীনের সহায়তায় নির্মাণ করা হয়। আর এটি চালু হয় ১৯৮৪ সালে। এনটিআই জানায়, ইস্পাহানে প্রায় তিন হাজার বিজ্ঞানী কাজ করেন। একে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ‘কেন্দ্রস্থল’ বলে ধারণা করা হয়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি