আইএইএ’র সঙ্গে সব সহযোগিতা বন্ধে ইরানের ভোট

ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা স্থগিত করার পরিকল্পনা সর্বসম্মতভাবে অনুমোদন করেছে ইরানের পার্লামেন্ট।
দেশটির ইসলামি পরামর্শদাতা পরিষদে এই প্রস্তাবের বিপক্ষে কোনো সদস্য ভোট দেননি। এর ফলে আন্তর্জাতিক পরমাণু তদারকি কাঠামো থেকে ইরানের কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
পার্লামেন্টে গৃহীত এই পরিকল্পনা অনুসারে, আইএইএ’র পরিদর্শন মিশন, নজরদারি ক্যামেরা স্থাপন এবং তথ্য রিপোর্ট প্রদানের মতো কার্যক্রম স্থগিত থাকবে, যতক্ষণ না ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
প্রস্তাবটি বর্তমানে গার্ডিয়ান কাউন্সিলের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পেলে এটি আইনে পরিণত হবে এবং বহু বছরের সীমিত সহযোগিতা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাবে।
এর আগে ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক সংসদীয় কমিশন এ সংক্রান্ত একটি খসড়া পরিকল্পনা অনুমোদন করে।
কমিশনের দাবি, আইএইএ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে একতরফাভাবে অবস্থান নিয়েছে এবং তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলার জন্য কূটনৈতিক অজুহাতে পরিণত হয়েছে।
সংসদে আলোচনার সময় স্পিকার মোহাম্মদ বাকের কালিবাফ বলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় না। কিন্তু আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা তাদের নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে এবং একটি রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ইরানে নিহত কমান্ডার-বিজ্ঞানীদের জানাজা শনিবার
আইএইএ’র সর্বশেষ প্রতিবেদনে ইরানকে ‘সহযোগিতাহীন’ বলে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ইরান তার অঘোষিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর তথ্য দেয়নি এবং উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ রয়েছে। সংস্থাটি ইরানকে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আহ্বান জানায়।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্রে বিমান হামলা চালায়। মার্কিন সামরিক বাহিনী অত্যাধুনিক বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান ব্যবহার করে ইরানের ভূগর্ভস্থ ফোরদো পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালায়।
তবে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (DIA) প্রাথমিক মূল্যায়নে জানা গেছে, এই হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির মূল উপাদান ধ্বংস হয়নি।
মূল্যায়নে বলা হয়, হামলায় ইরানের সমৃদ্ধকৃত ইউরেনিয়ামের মজুদ অক্ষত রয়েছে এবং সেন্ট্রিফিউজগুলোর অধিকাংশই রয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই আক্রমণ ইরানের পারমাণবিক অগ্রগতি মাত্র কয়েক মাস পিছিয়ে দিতে পেরেছে, কিন্তু মৌলিক কাঠামো ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে ডিআইএ এবং ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের যৌথ বিশ্লেষণে উঠে এসেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের পার্লামেন্টের এই পদক্ষেপ শুধু আইএইএ’র সঙ্গে সম্পর্কেই প্রভাব ফেলবে না, বরং এটি মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত স্থিতি, পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ উদ্যোগ, এবং পরমাণু চুক্তি পুনর্বহালের সম্ভাবনাকে আরও দুর্বল করে তুলবে। পাশাপাশি, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির স্বচ্ছতা কমে যাওয়ায় আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক কূটনীতিতে অস্থিরতা বাড়তে পারে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি