প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ ১০ বছর, শর্তসাপেক্ষে একমত বিএনপি

ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের (ন্যাশনাল কনসেনসাস কমিশন) সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার পর বিএনপি জানিয়েছে, তারা শর্তসাপেক্ষে সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর নির্ধারণের প্রস্তাবে একমত। তবে নির্বাহী বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি)-এর মতো আলাদা একটি শক্তিশালী নিয়োগ কমিটি গঠনের বিরোধিতা করেছে দলটি।
বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
একইসঙ্গে ২৪ জুন রাতে গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর কথাও জানান তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, একজন ব্যক্তি যাতে আজীবন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, সে লক্ষ্যে বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর নির্ধারণের বিষয়ে একমত হয়েছে। তবে মেয়াদ সীমা নির্ধারণ করতে গিয়ে রাষ্ট্রের কাঠামোয় ভারসাম্য নষ্ট করা যাবে না।
কমিশনের বৈঠক সূত্রে জানা যায়, মেয়াদ নির্ধারণে “দুই মেয়াদ” না “দুইবার” শপথ—এই দুই ধারণা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল।
অনেকে সংসদের দুই পূর্ণ মেয়াদের পক্ষে মত দেন, আবার কেউ কেউ বলেন, একজন ব্যক্তি জীবদ্দশায় কেবল দুইবারই প্রধানমন্ত্রীর শপথ নিতে পারবেন।
এই বিতর্কের প্রেক্ষাপটে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়, মেয়াদ গণনা করা হোক সময়ের ভিত্তিতে—সর্বোচ্চ ১০ বছর।
বিএনপি স্পষ্টভাবে জানায়, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল বা এনসিসির নামে একটি আলাদা শক্তি কেন্দ্র গঠন করে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করার প্রস্তাবে দলটি একমত নয়।
সালাহউদ্দিন বলেন, এক ব্যক্তি একসময় স্বৈরাচারী হয়েছিলেন বলে আজীবনের জন্য নির্বাহী ক্ষমতা খর্ব করতে হবে—এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি।
আরও পড়ুন: আন্দোলন রাজপথে গড়াবে: আসিফকে ইশরাকের হুঁশিয়ারি
তিনি জানান, বিএনপি মনে করে, বিদ্যমান আইনের আলোকে সার্চ কমিটি বা কমিশন গঠন করে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া বজায় রাখা সম্ভব। এজন্য নতুন করে সংবিধানে এনসিসির মতো আরেকটি প্রতিষ্ঠান গঠন করার প্রয়োজন নেই।
সাংবিধানিক নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভারসাম্য বিষয়ে বিএনপি আরও কিছু প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। যেমন:
সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর ‘বিসমিল্লাহ’ এবং ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’-এর ধারা বহাল রাখা।
ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী সংবিধানে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতির বিষয়গুলো সংযুক্ত করার প্রতি বিএনপির পূর্ণ সমর্থন।
প্রধান বিচারপতির নিয়োগের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতম দুই বিচারকের মধ্য থেকে যেকোনো একজনকে নিয়োগের সুপারিশ।
নারীদের জন্য জাতীয় সংসদে ১০০টি সংরক্ষিত আসন এবং সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের ক্ষেত্রে সদস্য সংখ্যা ১০০ জনে নির্ধারণের প্রতি দলটির সমর্থন।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হলে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং মুক্ত গণমাধ্যম নিশ্চিত করতে হবে। এগুলোর ওপর ভিত্তি করেই টেকসই সংবিধানিক সংস্কার সম্ভব।
বিএনপি বলছে, যেকোনো সংস্কার হতে হবে বাস্তবতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে, নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহিমূলক ক্ষমতা বজায় রেখে।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে সালাহউদ্দিন আহমদ কমিশনের সঙ্গে বিগত কয়েকদিনের আলোচনা তুলে ধরেন।
কমিশনের সঙ্গে বিএনপির আলোচনা পর্বটি এখনো চলমান। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চূড়ান্ত অবস্থান নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত যাচাই-বাছাই করে বিএনপি একটি সমন্বিত ও বাস্তবভিত্তিক সংস্কার প্রস্তাব জাতির সামনে উপস্থাপন করবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি