News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৯:৪০, ২৫ জুন ২০২৫

আন্দোলন রাজপথে গড়াবে: আসিফকে ইশরাকের হুঁশিয়ারি

আন্দোলন রাজপথে গড়াবে: আসিফকে ইশরাকের হুঁশিয়ারি

ছবি: সংগৃহীত

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে তীব্র অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। 

তিনি বলেন, কথাবার্তার লাগাম টেনে না ধরলে এবং আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হলে চলমান আন্দোলন নগর ভবন পেরিয়ে রাজপথে গড়াবে।

বুধবার (২৫ জুন) ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ইশরাক জানান, তার অনুরোধে গত ২৩ জুন (সোমবার) থেকে নগর ভবনে কর্মবিরতি সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে যাতে জনগণের জরুরি সেবা কার্যক্রম আবার সচল হয়। 

তবে, তিনি স্পষ্ট করেন যে এই সিদ্ধান্ত সরকারের কোনো চাপ, ভয়ভীতি বা আন্দোলনের দাবি থেকে সরে আসা নয় বরং নাগরিক দুর্ভোগ লাঘবে একটি কৌশলগত মানবিক সিদ্ধান্ত।

ইশরাক হোসেন বলেন, কোরবানির ঈদের পর নগর ভবনের কর্মকর্তারা নাগরিক সেবা যেমন জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, নাগরিক সনদ ও ওয়ারিশ সনদ প্রদান কার্যক্রম শুরু করতে চাইলেও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও সচিব তা বন্ধের নির্দেশ দেন। এতে স্পষ্ট হয় যে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে জনগণকে সেবা থেকে বঞ্চিত রেখে আন্দোলনকারীদের ওপর দায় চাপানোর ষড়যন্ত্র করেছে।

নগর ভবন খোলার সিদ্ধান্তের পরও ইশরাক জানান, নির্ধারিত দিনে, নির্ধারিত সময় ও নির্ধারিত স্থানে শান্তিপূর্ণ প্রতীকী আন্দোলন চলবে যাতে সেবা প্রার্থীদের কোনো অসুবিধা না হয়।

২৪ জুন আন্দোলনকারীদের ওপর পরিকল্পিত হামলার পেছনে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কিছু দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ করেন ইশরাক। 

তিনি দাবি করেন, হামলার মূল পরিকল্পনাকারী গোলাম কিবরিয়া রুবেলের বিরুদ্ধে অতীতে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এবং উপদেষ্টা আসিফ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রুবেল তার “লুটপাটের হাতিয়ার” হয়ে ওঠে। 

আরও পড়ুন: ‘মব জাস্টিস’ মানবতার শত্রু: তারেক রহমান

উল্লেখ্য, রুবেলের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা এবং হত্যাচেষ্টার অভিযোগও তোলা হয়।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সম্প্রতি মন্তব্য করেছিলেন, বিএনপির কয়েকজন নেতার প্ররোচণায় এই আন্দোলন হয়েছে এবং ইশরাক হোসেন “মিসগাইড” হয়েছেন। এই মন্তব্যকে ইশরাক শুধু নিজের প্রতি নয়, বরং ঢাকার আন্দোলনকারী নাগরিকদের প্রতি অবমাননাকর আখ্যা দেন। 

তিনি বলেন, এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে হাজার হাজার আন্দোলনকারীকে নাগরিক থেকে পশুর মর্যাদায় নামিয়ে আনা হয়েছে। 

এ ধরনের কথার জন্য আসিফ মাহমুদকে নগরবাসীর কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

২৫ জুন বিকেলে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ইশরাকের বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানান। 

তিনি প্রশ্ন তোলেন—“অকারণে আমার ছবিতে জুতা মারার জন্য কেউ ক্ষমা চেয়েছে? গুজবের ভিত্তিতে আমার পিতাকে ‘চাল চোর’ বলে অপমান করার জন্য কেউ ক্ষমা চেয়েছে? নগর ভবন বন্ধ করে এক কোটি নগরবাসীকে কষ্ট দেওয়ার জন্য কেউ ক্ষমা চেয়েছে?”

আসিফ মাহমুদ বলেন, আমি কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করিনি, বরং সত্য বলেছি। আমি বলেছি এই আন্দোলন কয়েকজন নেতার প্ররোচণায় হয়েছে, এবং এটি সত্য—যা ইশরাক নিজেও একাধিক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির কাছে স্বীকার করেছেন। 

তিনি আরও বলেন, ইতিহাস সবাইকেই যার যার প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়।

আসিফ মাহমুদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাকে এবং আমার পরিবারকে নিয়ে ধারাবাহিকভাবে মানহানিকর, হিংসাত্মক এবং অশোভন স্লোগান দেওয়া হয়েছে। অথচ আমি ব্যক্তিগতভাবে কাউকে ছোট করে কিছু বলিনি, রাজনীতির শিষ্টাচার মেনেই ধৈর্য ধরে চলেছি।

২৫ জুনের ঘটনাপ্রবাহে স্পষ্ট, নগর ভবনের আন্দোলন এখন আর শুধু শ্রমিক অসন্তোষ বা সেবা স্থবিরতা নিয়ে সীমাবদ্ধ নেই—এটি রূপ নিচ্ছে একটি বিস্তৃত রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে। ইশরাক হোসেনের হুঁশিয়ারি এবং আসিফ মাহমুদের জবাবে দুই পক্ষের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি শান্ত না হলে, নগরভবনের আন্দোলন অচিরেই ঢাকার রাজপথে বিস্তৃত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়