News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৮:০৩, ২৩ মে ২০২৫

ভারতের সঙ্গে ক্রয়চুক্তি থেকে সরে এলো বাংলাদেশ

ভারতের সঙ্গে ক্রয়চুক্তি থেকে সরে এলো বাংলাদেশ

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক টানাপোড়েন নতুন মাত্রা পেয়েছে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিলের মাধ্যমে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গের গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (GRSE)-এর সঙ্গে ২১ মিলিয়ন ডলারের (প্রায় ১৮০ কোটি রুপি বা ২৫৬ কোটি টাকায়) একটি প্রতিরক্ষা জাহাজ নির্মাণ চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত এমন সময় এলো যখন দুই দেশের সম্পর্ক বৈরী আবহে প্রবেশ করেছে—বিশেষ করে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর।

২০২৩ সালের জুলাইয়ে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির আওতায় ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা GRSE একটি উন্নত মানের সমুদ্রগামী টাগবোট নির্মাণের আদেশ পায়। এটি ছিল ৬১ মিটার দীর্ঘ, ৮০০ টন ধারণক্ষমতার একটি শক্তিশালী জাহাজ, যা সমুদ্রে উদ্ধার তৎপরতা, অগ্নিনির্বাপণ, টানার কাজ ও সীমিত দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হওয়ার কথা ছিল। 

GRSE-এর তথ্য অনুযায়ী, এই টাগবোটের সামনের দিক থেকে টানার ক্ষমতা ৭৬ টন এবং পেছন দিক থেকে ৫০ টন।

চুক্তিটি ছিল ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ২০২৩ সালে স্বাক্ষরিত ৫০০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা ঋণ সহযোগিতার প্রথম বড় প্রকল্প।

ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত সরাসরি এসেছে ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পোশাকপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ওপর স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে। ২০২৫ সালের মে মাসের প্রথমার্ধে ভারত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ১১টি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের পণ্য পরিবহন সীমিত করে। 

আরও পড়ুন: অবৈধ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাতে প্রস্তুত ভারত: জয়সওয়াল

এরপর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত আসে। তবে উল্লেখযোগ্যভাবে, GRSE নিজেই ভারতের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, বাংলাদেশ সরকার “সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে” তাদের ক্রয়াদেশ বাতিল করেছে।

এ ঘটনাকে কেবল দ্বিপাক্ষিক ব্যবসায়িক সংকট হিসেবে দেখলে ভুল হবে। বাংলাদেশের নতুন প্রশাসনের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি এক বক্তব্যে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে “স্থলবেষ্টিত” বলে উল্লেখ করেন এবং বাংলাদেশকে “এই অঞ্চলের সমুদ্রপথের একমাত্র অভিভাবক” হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি চীনকেও এই অঞ্চলে ব্যবসায়িক অংশীদার হওয়ার প্রস্তাব দেন।

এই বিবৃতিকে কেন্দ্র করে ভারতীয় কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, যার ফলশ্রুতিতে ভারত পণ্য পরিবহনে বিধিনিষেধ আরোপ করে বলে দাবি অনেক বিশ্লেষকের।

এই চুক্তি বাতিল দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে বড় ধরনের ধাক্কা দিলো। ভারত ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশকে ৮ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা দিয়েছে, যার বেশিরভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে শেখ হাসিনার আমলে। এই সাহায্যের আওতায় অবকাঠামোগত অনেক প্রকল্প আজও চলমান।

বাংলাদেশ ও ভারতের বাণিজ্যিক ভারসাম্যও ভারতের পক্ষে ভারি—২০২৪ অর্থবছরে ভারতের বাংলাদেশে রপ্তানি ছিল প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার, যেখানে বাংলাদেশ থেকে ভারতের আমদানি মাত্র ১.৮ বিলিয়ন ডলার।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই চুক্তি বাতিলের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ শুধু ভারতকে একটি বার্তা দিচ্ছে না—বরং এশীয় ভূরাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান পুনঃনির্ধারণের ইঙ্গিতও দিচ্ছে। চীন বা অন্য শক্তির দিকে ঝুঁকছে কি না, সেটি এখনই বলা কঠিন হলেও ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের মৈত্রীপূর্ণ সম্পর্কের উপর মেঘ জমতে শুরু করেছে বলেই মত কূটনৈতিক মহলের।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়