শিশুশ্রম বন্ধে আসছে কঠোর আইন

ছবি: সংগৃহীত
শিশুশ্রমের মতো সামাজিক ব্যাধি মোকাবেলায় দেশের বিদ্যমান শ্রম আইনের সংশোধন করে কঠোর শাস্তির বিধান যুক্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি বলেন, আগামী নভেম্বর ২০২৫-এর মধ্যেই এই সংশোধনী চূড়ান্ত করা হবে, যেখানে শিশুশ্রমে জড়িতদের জন্য জরিমানার পরিমাণ কয়েক গুণ বাড়ানো হচ্ছে।
বুধবার (১৮ জুন) বিকেলে রাজধানীর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বর্তমানে দেশে প্রায় ৩৫ লাখ শিশু শ্রমিক রয়েছে, যাদের মধ্যে ১০ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত রয়েছে। তবে সঠিক ও বিশ্বাসযোগ্য পরিসংখ্যান এখনো আমাদের হাতে নেই। শিশুশ্রম বন্ধে আমরা যে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিচ্ছি, তা বাস্তবভিত্তিক হবে।
তিনি আরও বলেন, শিশুরা কেউ কেউ বাবা-মায়ের সঙ্গে মাছ ধরতে যায়, আবার স্কুলেও যায়। অনেক সময় কোনো শিশু স্থানীয় ওস্তাদের সঙ্গে কাজ করতে করতে পরে নিজেই দক্ষ মেকানিক হয়ে ওঠে। কিন্তু এগুলো আইনিভাবে ভিন্নভাবে বিবেচনা করা হবে। আমরা বলছি— স্কুল সময়ের পরে যদি কোনো শিশু স্বেচ্ছায় কাজ করতে চায়, সেটা একরকম। কিন্তু জোর করে শিশুকে কাজে পাঠানো দণ্ডনীয় অপরাধ হবে এবং তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইএলও’র (আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা) ১৩৮ ও ১৮২ নম্বর কনভেনশনের অনুসমর্থনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিষিদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।
আরও পড়ুন: নির্বাচন ঘিরে পুলিশ বাহিনীকে প্রস্তুতির নির্দেশ
উপদেষ্টা বলেন, বিশ্ব শ্রম সংস্থার পক্ষ থেকে শ্রম আইন সংশোধনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। যদিও আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি, তবে তারা জানে আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে, অর্থাৎ নভেম্বরের মধ্যেই, শ্রম আইনের সংশোধনী চূড়ান্ত করতে চাই। সংশোধনী খসড়া ইতোমধ্যেই প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে জরিমানার হার কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে।
সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত আইএলও’র ১১১তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেন ড. সাখাওয়াত হোসেন। সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশের শ্রম আইনকে আরও শ্রমিকবান্ধব করার প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন। এ সময় মালিক, শ্রমিক এবং সরকারের প্রতিনিধিরা একযোগে বাংলাদেশের অগ্রগতির বিষয়টি তুলে ধরেন।
উপদেষ্টা বলেন, এটি ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন।
সাখাওয়াত হোসেন আরও জানান, আইএলওতে এবার বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো এশিয়া-প্যাসিফিক গ্রুপভুক্ত (ASPG) দেশগুলোর সমন্বয়কারী হিসেবে জাপানের কাছ থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। আগামী সম্মেলন বাংলাদেশেই অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি, যার জন্য সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, যারা শ্রম আইন অনুযায়ী ব্যবসায়িক রেজিস্ট্রেশন নেবে না, তাদের ব্যবসা করার অনুমতি দেওয়া হবে না। শ্রম আইন যথাযথভাবে প্রয়োগে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
প্রতিবছর ১২ জুন দেশে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস পালন করা হয়। তবে চলতি বছর ১২ জুন সরকারি ছুটি থাকায় ১৯ জুন দিবসটি উদযাপন করা হবে।
এবারের প্রতিপাদ্য— “স্বপ্নের ডানায় ভর করি, শিশুশ্রমের শৃঙ্খল ছিঁড়ি – এগিয়ে চলি দীপ্ত পায়ে, আশার আগুন বুকে জ্বালি।”
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি