নির্বাচন ঘিরে পুলিশ বাহিনীকে প্রস্তুতির নির্দেশ

ছবি: সংগৃহীত
সারা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখা এবং জনগণকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচন উপহার দিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশসহ (ডিএমপি) সকল পুলিশ সদস্যদের মানসিকভাবে সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
বুধবার (১৮ জুন) সকালে রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত মে-২০২৫ মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন।
সভায় ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আইজিপি বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোর একটি। এখান থেকে জনগণ সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতা আশা করে। প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে সতর্কতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
তিনি মোবাইল ডিউটি, গার্ড ডিউটি এবং কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনের সময় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ডিউটির সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার না করার ব্যাপারে কঠোর থাকতে হবে, যাতে মনোযোগ বিভ্রান্ত না হয়।
আইজিপি বাহারুল আলম নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর করতে হলে মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ডিএমপির প্রত্যেকটি থানা যেন তাদের আওতাধীন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখে এবং রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সকল দায়িত্ব পালন করে।
সভায় ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অপরাধীদের শনাক্ত করে গ্রেফতার কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। শুধু ডিবি নয়, সকল ইউনিটকেই আরও দক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
আরও পড়ুন: ইশরাকের কর্মকাণ্ড স্পষ্ট আইন লঙ্ঘন: উপদেষ্টা আসিফ
তিনি বলেন, দল-মত নির্বিশেষে, জাতীয় স্বার্থে জনগণের কল্যাণে শতভাগ নিরপেক্ষতা বজায় রেখে নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচনের সময় যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ডিএমপি সর্বদা প্রস্তুত থাকবে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) ফারুক আহমেদ বলেন, নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম এবং সম্ভাব্য নাশকতা প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। দাগি আসামিদের বিরুদ্ধে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ওয়ারেন্ট তামিলের হার বাড়াতে হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের তৎপরতা বাড়াতে হবে। জুলাই আন্দোলনের মামলা তদন্ত দ্রুত শেষ করতে হবে এবং ঝটিকা মিছিল প্রতিরোধে থানা ইউনিটগুলোকে সজাগ থাকতে হবে। ভাড়াটিয়াদের তথ্য দ্রুত হালনাগাদ করে সিআইএমএস-এ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সভায় যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মো. ফারুক হোসেন মে-২০২৫ মাসে ঢাকায় সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন।
এর মধ্যে ছিল ডাকাতি, দস্যুতা, চুরি ও সিঁধেল চুরি, খুন ও অপমৃত্যু, সড়ক দুর্ঘটনা, নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার সম্পর্কিত মামলা।
এই সভার শেষে, মে মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও নাগরিক সেবা নিশ্চিতকরণে বিশেষ অবদানের জন্য ডিএমপির বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করা হয়।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ বাহিনীকে প্রস্তুতির চূড়ান্ত পর্যায়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন আইজিপি। একইসঙ্গে অপরাধ দমন, তথ্যভিত্তিক গোয়েন্দা অভিযান, ওয়ারেন্ট তামিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ রাজনৈতিক তৎপরতা প্রতিরোধে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এটি ছিল একটি সতর্কবার্তা ও প্রস্তুতির বার্তা, যেখানে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে জনগণ যেন পায় একটি নির্বিঘ্ন, অবাধ ও নিরাপদ নির্বাচন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি