জবাবদিহিহীন এনসিসিকে ‘না’ বললো বিএনপি

ছবি: সংগৃহীত
নির্বাচন কমিশনের প্রকৃত স্বাধীনতা ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতার অভাবকে সামনে এনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, স্বাধীন, শক্তিশালী ও জবাবদিহিতামূলক নির্বাচন কমিশন ছাড়া নির্বাহী বিভাগ ও সংসদ কখনোই স্বৈরাচার থেকে মুক্ত হতে পারবে না।
বুধবার (১৮ জুন) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের (এনসিসি) সঙ্গে বিএনপির বৈঠক শেষে এবং পরে সংসদ ভবনের এলডি হলে চলমান দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন বলেন, যদি নির্বাচন কমিশন প্রকৃতভাবে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, তাহলে নির্বাহী বিভাগ ও সংসদের মধ্যে একটি ভারসাম্য আসবে, আর স্বৈরতন্ত্র চিরতরে বিদায় নেবে।
তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমানে নির্বাচন কমিশন গঠন ও কার্যক্রমে জবাবদিহিতার কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। যদি অথরিটি থাকে, পাওয়ার ও ফাংশন থাকে কিন্তু অ্যাকাউন্টেবিলিটি না থাকে, তাহলে গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আমরা এমন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে থাকতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, কমিশন এখন সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত হলেও ভবিষ্যতে এ প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও শক্তিশালী করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে আইন প্রণয়ন প্রয়োজন।
বিএনপি নেতা সরাসরি বলেন, প্রস্তাবিত জাতীয় সাংবিধানিক কমিশন (এনসিসি) সম্পর্কে তার দল একমত নয়। কমিশন রাষ্ট্রপতিকে প্রধান করে নয় সদস্যের একটি সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে—যেখানে প্রধানমন্ত্রী, উচ্চ ও নিম্ন কক্ষের স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেত্রী, প্রধান বিচারপতি এবং বিরোধী দল মনোনীত ডেপুটি স্পিকারের অন্তর্ভুক্তির কথা বলা হয়েছে।
এই প্রস্তাব প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন মন্তব্য করেন, এনসিসির মতো একটি সংস্থা যার ক্ষমতা ও দায়িত্ব আছে, কিন্তু জবাবদিহিতা নেই—এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আমরা সমর্থন করতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, যদি এসব ফাংশন আলাদা করে নতুন একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়, তাহলে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হবে।
আরও পড়ুন: জামায়াতকে বেশি কথা বলতে দেওয়ায় ওয়াক আউট গণফোরাম-সিপিবির
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও বিএনপি ভিন্নমত পোষণ করেছে। প্রস্তাবিত ব্যবস্থায় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে উপজেলা, জেলা এবং সংসদ সদস্যসহ প্রায় ৭০ হাজার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে একটি ইলেকটোরাল কলেজ গঠনের মাধ্যমে ভোটের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, নতুন কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন নেই। আমাদের মতে, সংসদ সদস্যদের মাধ্যমেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়া উচিত। যদি উচ্চকক্ষ গঠিত হয়, তাহলে সেখানকার সদস্যদের ভোট অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন সংস্কারের ওপর জোর দিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত আইন, সংবিধান ও সংশ্লিষ্ট বিধিগুলো পর্যালোচনা করে অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে সবার সঙ্গে আলোচনা করে নতুন আইন প্রণয়ন করা হোক।
তিনি বলেন, সংবিধানে সব কিছু উল্লেখ না থাকলেও প্রয়োজন অনুযায়ী আইন করে অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের সদস্য অপসারণের জন্য সংবিধানে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ব্যবস্থা থাকলেও তা যথেষ্ট নয়—অনিয়ম বা মিসকন্ডাক্টের ক্ষেত্রে পৃথক আইনি কাঠামোর দরকার রয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বর্তমান দুদক আইন সংস্কার প্রয়োজন। অতীতে সরকার এই কমিশনকে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করেছে। দুদকের কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ, স্বাধীন ও জবাবদিহিমূলক করতে হবে।
বিএনপি নেতা বলেন, সংবিধান নির্দেশনা দেয়, কিন্তু সুনির্দিষ্ট আইন ও বিধির মাধ্যমে কার্যকর জবাবদিহিতামূলক কাঠামো তৈরি না হলে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র কাগজে থাকবে, বাস্তবে নয়।
তিনি প্রত্যাশা করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিক আলোচনার মাধ্যমে সাংবিধানিক কাঠামোকে গণতান্ত্রিক ও ভারসাম্যপূর্ণ করা সম্ভব হবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি