‘দখল-চাঁদাবাজি করলে বিএনপিও আওয়ামী লীগে পরিণত হবে’

ছবি: সংগৃহীত
দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক করে, দখল ও চাঁদাবাজির মতো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে বিএনপিও আওয়ামী লীগে পরিণত হবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
একইসাথে তিনি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, লন্ডনে অনুষ্ঠিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক এবং আসন্ন নির্বাচন নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন।
বুধবার (১৮ জুন) রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির দলীয় সদস্যপদ নবায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, আপনি যদি দখল-চাঁদাবাজি করেন, তাহলেও আপনিও আওয়ামী লীগ হয়ে গেলেন।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই সব দুর্নীতি, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধেই আমাদের সংগ্রাম।
নেতাকর্মীদের প্রতি তার স্পষ্ট নির্দেশনা ছিল, কোনো কিছু জোর করে দখল করে, চাঁদাবাজি করে আমরা যেন মানুষের অধিকারকে হরণ না করি। আইন যেন নিজের হাতে তুলে না নিই।
তিনি আরও যোগ করেন, জোর করে নয়, ভালোবেসে জনগণের ভোট নিতে হবে। একইসাথে তিনি নিশ্চিত করেন যে, বিএনপি আওয়ামী লীগের মতো ভোট কারচুপি করবে না এবং আইন ভঙ্গ করবে না।
লন্ডনে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠককে “ঐতিহাসিক ঘটনা” হিসেবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের তারিখ ও সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব যখন বাড়ছিল, ঠিক তখনই এই বৈঠক দেশের মানুষকে স্বস্তি দিয়েছে।
তিনি জানান, বিএনপি ডিসেম্বরে নির্বাচন চেয়েছিল। তবে, ড. ইউনূস এপ্রিলে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিচক্ষণতার ভূয়সী প্রশংসা করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারেক রহমান আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের সময় ফেব্রুয়ারিতে নিয়ে আসেন, কারণ তিনি ডিসেম্বরে তার দাবিতে অনড় ছিলেন না। এটিকে তিনি একজন “দেশনায়কের গুণ” হিসেবে অভিহিত করে বলেন, তারেক রহমান দেশ ও জাতির জন্য সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করেন। তারেক রহমানের এই বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত এবং দেশের স্বার্থে পরিবর্তন আনার জন্য মির্জা ফখরুল ড. ইউনূসের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান।
মির্জা ফখরুল গত ১৭ বছরের রাজনৈতিক নিপীড়নের কথা তুলে ধরে বলেন, এই দীর্ঘ সময়ে মানুষ অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। তাদের একমাত্র চাওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়া। আমাদের আন্দোলন সেই অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার লড়াই।
আরও পড়ুন: সন্ধ্যায় হাসপাতালে যাবেন খালেদা জিয়া
তিনি অভিযোগ করেন, ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট শক্তি বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে ফেলেছিল।
তিনি বলেন, ছাত্রদের জীবনদান এবং ১৫ বছরের ত্যাগ শিকার হয়েছে শুধু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফেরার জন্য।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, দেশের ন্যায়বিচার ও জীবনের নিরাপত্তা ধ্বংস করেছিল আওয়ামী লীগ।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে যা করেছে আমরা এসব কিছুই করব না। আওয়ামী লীগের পরিণতি থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আমরা যেন সকলের অধিকার রক্ষা করতে পারি।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির দলীয় সদস্যপদ নবায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ দুঃশাসন চালিয়েছে এবং সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে।
তিনি জানান, তার দল ক্ষমতায় আসলে সর্বপ্রথম বেকার সমস্যার সমাধান করবে এবং এক কোটি বেকার মানুষের চাকরির ব্যবস্থা করবে। তরুণ যুবকদের প্রাধান্য দিয়ে সরকার চালানো হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সদস্য নবায়ন কর্মসূচিতে মির্জা ফখরুল সতর্ক করে বলেন, আজকে যে সদস্য নবায়ন করা হচ্ছে সেখানে যেন কোনো আওয়ামী লীগ না থাকে। কারণ এটা পরীক্ষিত, আওয়ামী লীগের কেউই ভালো না। আওয়ামী লীগ নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কারো স্বার্থ দেখতে পারে না। তাই তাদের কাউকে দলে নেওয়া যাবে না। তবে, নিরপেক্ষ কেউ থাকলে তাকে অবশ্যই দলে আসার জন্য আহ্বান জানানো হবে বলে তিনি জানান।
৩ জুলাই পর্যন্ত সদস্য নবায়ন করা যাবে এবং নিজ নিজ ওয়ার্ডে ফরম দেয়া হয়েছে। কোনো আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর সদস্য ফরম নবায়ন করা হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন।
নিজের বয়স এবং দলের তরুণ নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ফখরুল বলেন, আমাদের বয়স হয়েছে। যে কারণে বক্তব্য শুরু করতে আমার সময় লেগেছে। তার মানে আমাদের বয়স হওয়ায় কর্মক্ষমতা কমে গেছে। তাই আমাদের জায়গায় তরুণদের আসতে হবে, তাদের সুযোগ করে দিতে হবে। তরুণদের নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতে হবে।
গতকাল জামায়াতে ইসলামীর ঐকমত্য কমিশনে অনুপস্থিতির প্রসঙ্গে টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এত কিছুর পরও অনেকের মন ভালো নেই, যে কারণে গতকাল তারা আসেইনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি