অবৈধ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাতে প্রস্তুত ভারত: জয়সওয়াল

ফাইল ছবি
ভারতে অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশিদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে তৎপরতা বাড়িয়েছে নয়াদিল্লি।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) সাপ্তাহিকে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।
তিনি জানান, বর্তমানে অন্তত ২,৩৬৯ জন বাংলাদেশি নাগরিককে ফেরত পাঠাতে ভারত প্রস্তুত, যাদের অধিকাংশই শাস্তিভোগ সম্পন্ন করেছেন। তবে নাগরিকত্ব যাচাই না হওয়ায় তারা এখনও ভারতেই আটক রয়েছেন।
সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র বলেন, আমাদের কাছে ২,৩৬৯ জনের তালিকা রয়েছে। এদের মধ্যে বহুজন ২০২০ সাল থেকেই নাগরিকত্ব যাচাইয়ের অপেক্ষায় রয়েছেন। বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করেছি।
ভারতের অভিযোগ, এসব ব্যক্তির অনেকেই বেআইনিভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে দেশটিতে প্রবেশ করেছেন। কেউ কেউ বিভিন্ন অপরাধে কারাদণ্ড ভোগ করেও এখনো ফেরত যেতে পারেননি, শুধুমাত্র বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের জাতীয়তা নিশ্চিত না করার কারণে।
জয়সওয়াল বলেন, এটি একটি মানবিক ও আইনি বিষয়। আমরা আশা করি বাংলাদেশ সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
আরও পড়ুন: লন্ডনে সালমানপুত্র সায়ানের সম্পত্তি জব্দ
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বেআইনিভাবে অবস্থানকারী বিদেশিদের বিরুদ্ধে অভিযান তীব্রতর করা হয়েছে। গুজরাটে গত মাসে আটক করা হয় প্রায় ১,০০০ জনকে, যাদের অনেকেই বাংলাদেশি বলে দাবি ভারতের। এছাড়া আসামের দক্ষিণ সালমারা জেলায় মে মাসের শুরুতে ৫ জন বাংলাদেশিকে গ্রেফতারের পর দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় হয়ে উঠেছে “পুশ-ইন” প্রক্রিয়া—যার মাধ্যমে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় ৩০০ জনকে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এদের মধ্যে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারাও রয়েছেন বলে জানা গেছে। এসব ঘটনা ঘটেছে মূলত ৭ থেকে ৯ মে’র মধ্যে, প্রত্যন্ত সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এসব কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কূটনৈতিকভাবে আপত্তি জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারত সরকারকে বিষয়টি বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছে এবং নাগরিকত্ব যাচাইয়ের ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগের আহ্বান জানিয়েছে।
নয়াদিল্লির মতে, নাগরিকত্ব যাচাই কার্যক্রম দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে যাওয়ায় ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া কার্যকর হচ্ছে না। অনেক বাংলাদেশি ২০২০ সাল থেকে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করেও বন্দিদশায় রয়েছেন। এর ফলে মানবিক সংকট ও কূটনৈতিক টানাপোড়েন সৃষ্টি হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতি নিরসনে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। এক তরফা পদক্ষেপ, বিশেষ করে পুশ-ইনের মতো কার্যক্রম, দীর্ঘমেয়াদে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ভারতে বসবাসরত অননুমোদিত বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো এখন দুই দেশের জন্য একটি জটিল কূটনৈতিক ও মানবিক ইস্যুতে রূপ নিয়েছে। নাগরিকত্ব যাচাই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, গতি এবং যৌথ সহযোগিতা নিশ্চিত করা না গেলে ভবিষ্যতে আরও জটিলতা তৈরি হতে পারে। উভয় দেশের উচিত আইনি কাঠামো ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে একটি দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই সমাধানে পৌঁছানো।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি