সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রস্তুতিতে সেনাবাহিনী, ইসির নির্দেশনার অপেক্ষা

ছবি: সংগৃহীত
আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত অবস্থানে আছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তবে সরকার থেকে নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও এখনও নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।
সেনাবাহিনী আশা করছে, শিগগিরই ইসির পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাওয়া যাবে।
সোমবার (০৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনার আলোকে সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মাঠে কাজ করবে।
কর্ণেল শফিকুল সাংবাদিকদের জানান, কমিশন থেকে আমরা অচিরেই নির্বাচনের নির্দেশনা পাব। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা মাঠে কাজ করব। ইতিমধ্যে আমাদের নিজেদের প্রস্তুতি রয়েছে।
তিনি আরও যোগ করেন, সেনাবাহিনী সরকারের নির্দেশ ও ইসির নির্দেশনার মধ্যে সমন্বয় রেখে নির্বাচন কার্যক্রমে সহায়তা করবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন এবং ব্যালট ছিনতাইয়ের আশঙ্কা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কর্নেল শফিকুল বলেন, ডাকসু নির্বাচনের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে এই নির্বাচন গণতন্ত্রের চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সেনাবাহিনী বিশ্বাস করে।
তিনি আরও বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল প্রোপাগান্ডার চেষ্টা করছে, কিন্তু এর মাধ্যমে কোনো কার্যকর সুবিধা হবে না। সেনাবাহিনী ইতিমধ্যেই আইএসপিআরের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, ডাকসু নির্বাচনের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচনে সেনাবাহিনীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই: সেনা সদর দপ্তর
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কিছু কর্মকর্তা সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন—এমন অভিযোগের বিষয়ে কর্নেল শফিকুল বলেন, তাদের উদ্দেশ্য মানুষ জানে। এসব প্রোপাগান্ডা কেউ বিশ্বাস করে না। সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
গত ৫ আগস্ট হারানো অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে কর্নেল শফিকুল জানান, ইতিমধ্যে ৮০ শতাংশ অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। বাকিগুলোও দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা কেবল সেনাবাহিনীর কাজ নয়। সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। কোথাও কোথাও কিছুটা সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে। যেমন—পুলিশ জানে না, সেনাবাহিনী জানে না—তখন কিছুটা দেরি হয়। তবে সেনাবাহিনী মাঠে নামলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া মব (গণপিটুনি) পরিস্থিতি সম্পর্কে কর্নেল শফিকুল জানান, সোর্স থেকে তথ্য পেতে দেরি হওয়ায় কখনো কখনো ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সময় লাগে। তবে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে কখনো মবকে কার্যকরভাবে কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া হয়নি।
রাজবাড়ীতে কবর থেকে লাশ উত্তোলনের ঘটনায় সেনাবাহিনী দেরিতে পৌঁছেছে—এ অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরে সেনাবাহিনী উপস্থিত হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধাকে অপমানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কর্নেল শফিকুল স্পষ্ট করেন, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যই এই দেশটির জন্ম। তাঁদের প্রতি আমাদের সর্বদা শ্রদ্ধা ও সম্মান রয়েছে এবং থাকবে।
সেনাবাহিনী এই মুহূর্তে পুরোপুরি প্রস্তুত অবস্থানে রয়েছে। ইসি থেকে আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা পাওয়ার পর তারা নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পাদনে মাঠে কার্যক্রম শুরু করবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি