News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৮:৫৯, ১৭ জুন ২০২৫

‘৭০ অনুচ্ছেদে সীমিত দলীয় নিয়ন্ত্রণে ঐকমত্য’

‘৭০ অনুচ্ছেদে সীমিত দলীয় নিয়ন্ত্রণে ঐকমত্য’

ফাইল ছবি

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে বিরোধী দলের নেতৃত্ব এবং নারী আসন সংরক্ষণসহ একাধিক বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি দেখা দিয়েছে। 

ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত সংলাপের দ্বিতীয় ধাপের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় অংশ নেওয়া প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল এসব বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) সকাল পৌনে ১২টায় ঢাকার বেইলি রোডে অবস্থিত ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে এ ধাপের আলোচনা শুরু হয়। 

এতে বিএনপি, এনসিপি, সিপিবি, বাসদ, ইসলামী আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, খেলাফত মজলিসসহ প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি অংশ নেন। তবে জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।

আলোচনায় সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে দুইটি বিষয়ে—আস্থাভোট ও অর্থবিল—দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে চলার বাধ্যবাধকতায় সব দল একমত হয়েছে। 

আলোচনা চলাকালে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। 

তিনি বলেন, এই দুটি বিষয়ের বাইরে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন। এ সিদ্ধান্ত জাতীয় সনদে সুনির্দিষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত হবে এবং তাতে সব দলের স্বাক্ষর থাকবে।

বিএনপির পক্ষ থেকে অতিরিক্তভাবে জাতীয় নিরাপত্তা ও যুদ্ধ পরিস্থিতির মতো বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখনও আলোচনা চলছে। 

তবে সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, আমরা ক্ষমতায় গেলে এই দুটি বিষয়ও সংযুক্ত করব। এ বিষয়ে আমাদের দলীয় অবস্থান দৃঢ়।

আরও পড়ুন: ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ বয়কট করলো জামায়াত

এদিনের আলোচনায় সংসদের চারটি গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী কমিটির—পাবলিক অ্যাকাউন্টস, প্রিভিলেজ, ইস্টিমেশন এবং পাবলিক আন্ডারটেকিং— সভাপতির পদ বিরোধী দলকে দেওয়ার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে পৌঁছেছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই চারটির বাইরে অন্যান্য কমিটিতেও বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ‘আসন অনুযায়ী আনুপাতিক হারে’ নির্ধারিত হবে।

সালাহউদ্দিন বলেন, গণতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় বিরোধী দলের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।

নারী প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধিতে ১০০টি সংরক্ষিত আসন রাখার প্রস্তাবে প্রায় সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। তবে এই আসনগুলোর বণ্টন ও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। 

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সরাসরি ভোট, দলীয় মনোনয়ন কিংবা সমন্বিত তালিকা—এই তিনটি বিকল্প প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা চলছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত ‘জুলাই সনদ’-এর পাশাপাশি প্রতিটি রাজনৈতিক দল নিজস্ব ইশতেহার প্রকাশ করবে। জাতীয় সনদে ৭০ অনুচ্ছেদের প্রস্তাবিত সংশোধন, সংসদীয় কমিটিতে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ, সংরক্ষিত নারী আসন এবং আরও কিছু মৌলিক বিষয়ে সম্মিলিত প্রতিশ্রুতি থাকবে।

সংলাপের সূচনা বক্তব্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রীয়াজ বলেন, জাতি ও রাষ্ট্রের স্বার্থে সবাইকে ছাড় দিতে হবে। সহযোগিতা পেলে জুলাই মাসেই জাতীয় সনদ প্রকাশ করা সম্ভব হবে। 

তিনি জানান, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, দ্বিকক্ষ সংসদ, নারী প্রতিনিধিত্ব, প্রধান বিচারপতির নিয়োগ প্রক্রিয়া, এবং সংসদীয় কমিটির কাঠামো—এই বিষয়গুলোতে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তোলা এ সংলাপের মূল লক্ষ্য।

কমিশন জানিয়েছে, এখনো যেসব সংবিধান সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি—তথা দ্বিকক্ষ সংসদ, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া, সংসদ ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ধাপে ধাপে পরবর্তী আলোচনায় বসা হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতিতে আগামী শনিবার পর্যন্ত আলোচনা চলতে পারে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়