ফিরতি যাত্রার সময় কোরবানির মাংস প্যাকেট করবেন যেভাবে

ছবি: ইন্টারনেট
ঈদ-উল-আযহায় অনেকেই কোরবানি দেন গ্রামের বাড়িতে, পরে সেই মাংস নিয়ে ফেরেন রাজধানী বা অন্য শহরে। কিন্তু যাত্রাপথে কাঁচা মাংস বহনে পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। বাস, ট্রেন বা লঞ্চে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে দেখা যায়-ব্যাগ থেকে পানি চুইয়ে পড়ছে, দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, এমনকি অতিরিক্ত গরমে মাংস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
প্রাকৃতিকভাবেই কাঁচা মাংসে ব্যাকটেরিয়া থাকে। এটি যদি ঠান্ডা না রাখা হয়, বিশেষ করে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায়, তবে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বাড়ে এবং মাংস দ্রুত পচে যেতে পারে। বিশেষ করে পানিযুক্ত অবস্থায় প্যাক করা হলে সেই আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়।
এই সমস্যাগুলো এড়াতে প্রয়োজন সঠিক প্যাকেজিং এবং একটু বাড়তি সতর্কতা। মাংস ঠান্ডা করে, পানিশূন্য করে, হাওয়া ঢুকতে না দেয় এমন প্যাকেটে ভরে পরিবহন করলে তা দীর্ঘ সময় ভালো থাকে। সঙ্গে বরফ বা আইসজেল প্যাক ব্যবহার করলে মাংস টিকিয়ে রাখা আরও সহজ হয়।
চলুন জেনে নিই কীভাবে কোরবানির মাংস সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও পরিবহন করলে তা তাজা থাকবে এবং নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি কমবে-
১. রক্ত ও পানি ঝরিয়ে শুকনো করা: কোরবানির পরে মাংস অন্তত ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা খোলা জায়গায় ছায়ায় রেখে দিন। যেন রক্ত ও অতিরিক্ত পানি ঝরে যায়। এভাবে রাখলে মাংসের গঠন মজবুত হয় ও তা দীর্ঘক্ষণ ভালো থাকে।
২. ছোট ছোট ভাগে কাটা: মাংস বড় বড় চাকা আকারে থাকলে তা ভেতর পর্যন্ত ঠান্ডা হতে সময় নেয়। তাই ছোট ছোট টুকরায় কেটে নিলে তা সহজে ঠান্ডা হয় এবং সংরক্ষণের উপযোগী হয়।
৩. ফুড গ্রেড পলিপ্যাক বা জিপলক ব্যাগ ব্যবহার: সাধারণ বাজারের পলিব্যাগে মাংস রাখা অনুচিত। বরং ফুড গ্রেড প্লাস্টিকের ব্যাগ, জিপলক ব্যাগ বা ভালো মানের ফুড কন্টেইনার ব্যবহার করুন। এতে মাংসের পানি বাইরে পড়বে না, দুর্গন্ধ ছড়াবে না এবং ব্যাগও পরিষ্কার থাকবে।
৪. ডিপ ফ্রিজে জমিয়ে নেয়া: যদি সময় পাওয়া যায়, তাহলে গ্রামের বাড়িতে মাংস অন্তত ৮-১০ ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে একটু জমিয়ে নিন। হালকা ফ্রোজেন মাংস দীর্ঘ সময় নষ্ট না হয়ে থাকে। বিশেষ করে ১০-১২ ঘণ্টার বাস বা ট্রেন জার্নির জন্য এটি খুবই কার্যকর।
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত মাংস খেয়ে ফেলার অস্বস্তি কমাতে করণীয়
৫. কুলার ব্যাগ বা আইস বক্স ব্যবহার: শহরে ফেরার সময় সম্ভব হলে একটি আইস বক্স বা ইনসুলেটেড কুলার ব্যাগ ব্যবহার করুন। এর ভেতরে বরফ বা আইস জেল প্যাক দিয়ে মাংস রাখলে তা দীর্ঘ সময় ঠান্ডা থাকবে। এখন অনেক স্টেশনারি বা অনলাইন শপেই কম দামে এই ব্যাগগুলো পাওয়া যায়।
৬. পত্রিকা ও কাপড় দিয়ে মোড়ানো: যদি আইস বক্স সম্ভব না হয়, তাহলে পলিপ্যাকে প্যাক করার পরে মাংস পত্রিকা ও পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মোড়ান। এতে বাইরের তাপ সরাসরি ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। বরং এক ধরনের ইনসুলেশন তৈরি হয়।
৭. আলাদা ব্যাগে রাখা: মাংসের ব্যাগ কখনো অন্য জিনিসের সাথে রাখবেন না। আলাদা ব্যাগ ব্যবহার করুন, যাতে কোনো রকম লিকেজ হলেও অন্যান্য জিনিসপত্রের ক্ষতি না হয়।
৮. বাস বা ট্রেনে ভ্রমণের সময় তাপমাত্রা বিবেচনায় রাখা: যদি দিনের বেলা প্রচণ্ড রোদের সময় ভ্রমণ করতে হয়, তাহলে সম্ভব হলে মাংস ব্যাগটি বাসের ভেতরে রাখার চেষ্টা করুন, ট্রেন হলে জানালার নিচে বা ঠান্ডা স্থানে রাখুন।
এরপর শহরে পৌঁছে মাংস প্রথমেই ফ্রিজে রাখুন। যদি মাংস একেবারে কাঁচা থেকে যায়, তাহলে কেটে, ধুয়ে ও ভাগ করে সংরক্ষণ করুন। দ্রুত রান্না করতে চাইলে ফ্রিজে, না হলে ডিপ ফ্রিজে বা ফ্রিজারে রাখুন।
ঈদের আনন্দ বাড়িয়ে তুলতে চাই সতর্কতা ও সচেতনতা। কোরবানির মাংস যদি সঠিকভাবে প্যাক করা না হয়, তাহলে তা শুধু আপনার নিজের জন্য নয়, পরিবহনযাত্রার সকলের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে। একটু বাড়তি প্রস্তুতিই পারে বড় ভোগান্তি থেকে রক্ষা করতে।
তাই ঈদের ভ্রমণে শুধু পোশাক-আশাক নয়, রাখুন প্রয়োজনীয় প্যাকেজিং সরঞ্জামও। এতে করে সবার ঈদ কাটবে ঝামেলাবিহীন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এসবি