ঈদে মাংস খাবেন কতটুকু, হজমে সমস্যা হলে মানুন এই পরামর্শ

ছবি: সংগৃহীত
কোরবানির ঈদ মানেই খাবার টেবিলে গরুর মাংসসহ নানা বাহারি পদে ভরপুর আয়োজন। এসময় অনেকের মনেই একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খায়- গরু, মহিষ, খাসি, ভেড়া, দুম্বা কিংবা উটের মাংস কি সবাই খেতে পারেন? আর খেতে পারলেও কতটুকু খাওয়া উচিত?
এ সময় প্রায় প্রতিটি ঘরেই মাংসের প্রাচুর্য দেখা যায়। ফলে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেকেই বেশি পরিমাণে মাংস খান। তবে অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার কারণে অনেকেরই হজমে সমস্যা দেখা দেয়। গরুর মাংস কতটুকু খাচ্ছেন, তার ওপরই নির্ভর করে এর উপকারিতা ও অপকারিতা।
এ বিষয়ে পুষ্টিবিদরা বলেন, 'এটি একটি অ্যালার্জিক খাবার। এতে উচ্চমাত্রার প্রোটিন এবং হিম আয়রন আছে। মাংস খেলে প্রায় ৬০ শতাংশ আয়রন শরীর শোষণ করতে পারে। এছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে রয়েছে ২৬ গ্রাম প্রোটিন।'
পুষ্টিবিদরা আরও জানান, গরুর মাংসে রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ভিটামিনস, মিনারেলস বা খনিজ উপাদান যেমন- জিংক, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, আয়রন। আবার ভিটামিনের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি২ বি৩, বি৬ এবং বি১২। এছাড়া গরুর মগজ ও কলিজায় প্রোটিন থাকলেও সেটার পরিমাণ কম বরং এর বেশিরভাগ জুড়ে রয়েছে কোলেস্টেরল।
পুষ্টিবিদদের মতে, একজন সুস্থ মানুষের জন্য প্রতিদিন ৫০ গ্রামের মতো প্রোটিন প্রয়োজন। তবে যদি তার কিডনি জটিলতা থাকে তাহলে তিনি প্রতিদিন ২৫ গ্রাম প্রোটিন খাবেন। মানে স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেক। আবার মেয়েদের গর্ভবতী অবস্থায় এই পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যাবে। অর্থাৎ আদর্শ ওজন ৫০ কেজি হলে তারা ১০০ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন খেতে পারবেন। যাদের ওজন আদর্শ ওজনের চাইতে কম তাদেরও বেশি বেশি প্রোটিন খাওয়া প্রয়োজন।
মাংসে থাকা এসেন্সিয়াল ফ্যাটি এসিড (লিনোলিক এসিড) ডায়াবেটিস ও ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সাধারণত এক বছর বয়স থেকে মানুষ পরিমিত পরিমাণে মাংস গ্রহণ করতে পারে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১ থেকে ৫ গ্রাম আমিষ গ্রহণ করতে হয়। যা পাওয়া যেতে পারে মাছ, মাংস, দুধ,ডিম, ডাল, বাদাম, বিচিজাতীয় খাবার থেকে। এগুলো বিভিন্ন খাবার থেকে নিতে পারলে ভালো হয়।
আরও পড়ুন: যে কারণে হাঁচি দিলে চোখ বন্ধ হয়ে যায়
১০০ গ্রাম হাড় ছাড়া মাংস থেকে ২০ গ্রাম মতো আমিষ পাওয়া যায়। একজন ৫০ কেজি ওজনের মানুষের প্রতিদিন ৫০-৭৫ গ্রাম আমিষের প্রয়োজন। এই পরিমাণ আমিষ পেতে প্রায় ২৫০ থেকে ৩৭৫ গ্রাম মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডাল, বাদাম, বিচি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। এর তিন ভাগের এক ভাগও মাংস থেকে গ্রহণ করতে চাইলে প্রতিদিন ১০০ গ্রাম মাংস খুব সহজেই খাওয়া যায়। তবে যাদের বিভিন্ন রোগ আছে, যেমন: হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, স্ট্রোক, হার্টের অসুখ ইত্যাদি, তাদের ক্ষেত্রে ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে ঠিক করতে হবে কতটুকু আমিষ নিতে হবে।
মাংস খাওয়ার সময় প্রচুর শাকসবজি ও সালাদ খেতে হবে। এতে হজম ভালো হবে। পোলাও, বিরিয়ানি, পরোটা, লুচি ইত্যাদির সঙ্গে মাংস না খেয়ে, বাদামি চালের ভাত ও বাদামি আটার রুটির সঙ্গে মাংস খেতে পারলে ভালো হবে। এ সময়ে ডেজার্ট, যেমন: ফিরনি, পায়েস, পুডিং, কাস্টার্ড, জর্দা, মিষ্টিদই ইত্যাদি খাওয়া বাদ দেওয়াই ভালো, তবে টক দই খাওয়া যাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, 'মাংসে উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন ও ফ্যাট থাকায় এটি হজমে বেশি সময় লাগে। তবে প্রাকৃতিককিভাবে খাবারে কিছু হজমকারী এনজাইম বা উপাদান থাকে, যা হজম প্রক্রিয়াকে অনেক সহজ করে তোলে।'
এবার তাহলে হজমে সমস্যা হলে করণীয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:
পেঁপে: এতে প্যাপেইন নামক একপ্রকার উপাদান থাকে, যা দ্রুত মাংস হজম করতে সহায়তা করে। এ কারণে খাবার টেবিলে সালাদের সঙ্গে পেঁপে রাখতে পারেন।
দই: দই বা দই দিয়ে তৈরি খাবার রাখতে পারেন খাবার টেবিলে। কেননা, দইয়ে উপকারী ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। যা মাংস বা মাংসজাতীয় খাবার হজম করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
আনারস: এই ফলে ব্রেমেলেইন নামক উপাদান রয়েছে, যা প্রোটিন ভাঙতে সহায়তা করে। তাই খাদ্যতালিকায় আনারস রাখলে হজমে উপকার পেতে পারেন।
এছাড়া কোল্ড ড্রিংকসের পরিবর্তে বোরহানি রাখা যেতে পারে। আর হজমে যদি বেশি সমস্যা হয় তাহলে কালক্ষেপণ না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে একদমই ভুলবেন না।