News Bangladesh

স্পোর্টস ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৩:২৬, ২০ জুন ২০২৫

হতাশায় বাংলাদেশ, এগিয়ে লঙ্কা

হতাশায় বাংলাদেশ, এগিয়ে লঙ্কা

ছবি: সংগৃহীত

গল টেস্টের চতুর্থ দিনে সকালটা যতটা আশাব্যঞ্জক ছিল, দিন শেষে বাংলাদেশের সামনে চিত্রটা হয়ে উঠেছে বেশ হতাশাজনক। 

প্রথম ইনিংসে ৪৯৫ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়েও চতুর্থ দিনের মধ্যাহ্ন-বিরতির সময় শ্রীলঙ্কা পৌঁছে গেছে ৬ উইকেটে ৪৬৫ রানে, বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে মাত্র ৩০ রানে। হাতে রয়েছে ৪টি উইকেট, আর ক্রিজে আছেন দুটি গুরুত্বপূর্ণ অবিচ্ছিন্ন ব্যাটার—কামিন্দু মেন্ডিস ও মিলান রাত্নায়াকে।

দিনের শুরুটা ছিল বাংলাদেশের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। ৯৬তম ওভারে স্পিনার নাঈম হাসান অফ স্টাম্পের বাইরের একটি ডেলিভারিতে খোঁচা দিয়ে কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরে যান শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। তাকে ক্যাচে পরিণত করেন লিটন দাস। এরপর ১০১তম ওভারে পেসার হাসান মাহমুদ ফেরান কুশল মেন্ডিসকে—বামদিকে ঝাঁপিয়ে নেওয়া দারুণ এক ক্যাচে উইকেটের পেছনে আবারও অবদান রাখেন লিটন। সেই সময়ে মনে হচ্ছিল, হয়তো বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে ম্যাচের গতি।

কিন্তু সে সম্ভাবনায় ছেদ টানে বাজে ফিল্ডিং ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ব্যর্থতা। দিনের প্রথম ঘণ্টার পরই স্পিন আক্রমণে আসেন তাইজুল ইসলাম। এসেই তিনি জীবন দেন মাত্র ৭ রানে থাকা মিলান রাত্নায়াকে—ফিরতি ক্যাচ মুঠোবন্দি করতে পারেননি বাঁহাতি এই স্পিনার। সেই জীবন পেয়ে ক্রমশ দৃঢ়তা পান মিলান, এবং তার সঙ্গে অপর প্রান্তে ধীর স্থিরতায় এগিয়ে যেতে থাকেন কামিন্দু মেন্ডিস। এই দুই ব্যাটার সপ্তম উইকেটে গড়ে তোলেন ৭৯ রানের অবিচ্ছিন্ন এক জুটি, যা বাংলাদেশের সব আশাকেই ঝাপসা করে তোলে।

চতুর্থ দিনের সকালের সেশনে মোট ৩১ ওভারে শ্রীলঙ্কা তোলে ৯৭ রান, হারায় মাত্র দুটি উইকেট। ব্যাট হাতে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন কামিন্দু মেন্ডিস। ৮৬ বলে চারটি চারে নিজের হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর, তিনি আরও আগ্রাসী ভঙ্গিতে খেলতে থাকেন। লাঞ্চে যাওয়ার সময় তিনি অপরাজিত ছিলেন ১৩৯ বলে ৮৩ রানে, মারেন ৭টি চার ও ১টি ছক্কা। আর তার সঙ্গী মিলান রাত্নায়াকে ৭৬ বলে ৩৮ রান করে ক্রিজে ছিলেন, তিনিও মারেন তিনটি চার ও একটি ছক্কা।

আরও পড়ুন: শান্ত-মুশফিকের রানের পাহাড়ে পাঁচশর দোরগোড়ায় থামল বাংলাদেশ

বাংলাদেশের হয়ে এই সেশনে সফল ছিলেন দুই বোলার—নাঈম হাসান ও হাসান মাহমুদ। কিন্তু সামগ্রিকভাবে বোলিং ছিল ধারাবাহিকতাহীন। দ্বিতীয় রিভিউটিও হারায় বাংলাদেশ, লিটনের জোরালো আবেদনে শান্ত সিদ্ধান্ত নিলেও রিপ্লেতে দেখা যায়, বল গ্লাভস ছুঁয়ে যায়নি, বরং ট্রাউজার ছুঁয়ে গেছে। ফলে হাতে থাকে মাত্র একটি রিভিউ, যা ম্যাচের গভীরে গিয়ে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।

এর আগে তৃতীয় দিনের শেষে শ্রীলঙ্কার স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ৩৬৮। নিসাঙ্কার দুর্দান্ত ১৮৭ রানের ইনিংসে ভর করে স্বাগতিকরা জবাব দেয় বাংলাদেশের বড় সংগ্রহের। বাংলাদেশ তখনও এগিয়ে ছিল ১২৭ রানে। কিন্তু সেই ব্যবধান এখন কমে এসেছে মাত্র ৩০-এ, তাও হাতে থাকা ৪ উইকেটের ব্যবধানে।

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ১৫৩.৪ ওভারে ৪৯৫ রান। শান্ত করেন ১৪৮, মুশফিক করেন ১৬৩, আর লিটন দাস করেন ৯০ রান। শ্রীলঙ্কার পক্ষে আসিথা ফার্নান্ডো ৪টি এবং মিলান রাত্নায়াকে ৩টি উইকেট নেন। শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে পাথুম নিসাঙ্কা একাই গড়ে দেন ভিত—১৮৭ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস। এরপর চান্দিমাল (৫৪), ম্যাথিউস (৩৯), এবং পরে কামিন্দু ও মিলানের স্থিতিশীল ইনিংসে ভর করে চাপ সামাল দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে স্বাগতিকরা।

চতুর্থ দিন শেষে তাই বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন দ্রুত শেষ চারটি উইকেট তুলে নেওয়া। অন্যথায় কামিন্দু-মিলানের এই জুটি বড় ব্যবধানে লিড এনে দিতে পারে শ্রীলঙ্কাকে। বাংলাদেশের ফিল্ডিং, রিভিউ ব্যবস্থাপনা ও স্পিনারদের ধারাবাহিকতা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

গল টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে ম্যাচ আবার এমন এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে পরবর্তী সেশনই হয়তো নির্ধারণ করে দেবে ম্যাচের দিকনির্দেশনা। এখন দেখার বিষয়—বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়াতে পারে কিনা।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়