বাজেটে আওয়ামী সরকারেরই প্রতিচ্ছবি: খসরু

ফাইল ছবি
প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটকে ‘সংখ্যাগতভাবে কিছুটা ছোট হলেও’ গুণগত দিক থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিকতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাবিত বাজেটে মৌলিক কাঠামোতে কোনও পরিবর্তন আসেনি এবং রাজস্ব আয়ের সঙ্গে বাজেটের আকারের কোনও সামঞ্জস্য নেই।
সোমবার (২ জুন) রাজধানীর বনানীর হোটেল সারিনায় সাংবাদিকদের সঙ্গে বাজেট-পরবর্তী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন তিনি।
একইসঙ্গে জানান, আগামী ৪ জুন (বুধবার) সকাল ১১টায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাজেট নিয়ে দলের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
আমীর খসরু বলেন, এটা যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেট, তাই আমাদের প্রত্যাশাও সীমিত। এই সরকারের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ ও সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু এরপরও বলব, বাজেটের আকার ও কাঠামো আগের সরকারেরই প্রতিচ্ছবি বহন করে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান বাজেটে মৌলিক কোনও পরিবর্তন নেই। শুধুমাত্র সংখ্যার তারতম্য হয়েছে। রাজস্ব আয়ের সম্পূর্ণটা পরিচালন ব্যয়ে ব্যয় হয়ে গেলে উন্নয়নের জন্য পুরো অর্থই দেশের ভেতর কিংবা বাইর থেকে ঋণ নিয়ে চালাতে হয়। এতে একদিকে যেমন ঋণের বোঝা বাড়ে, অন্যদিকে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
বিশেষ করে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বিগত সরকার বাজেটের আকার বাড়িয়ে এমন এক জায়গায় নিয়ে গেছে, যার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রকৃত রাজস্ব আয়ের কোনও সম্পর্ক নেই। উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের জন্য দেশি-বিদেশি ঋণের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।
আরও পড়ুন: ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায় সব দল: সালাহউদ্দিন
বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ না বাড়ার পেছনেও বাজেট কাঠামোকে দায়ী করেন তিনি।
আমীর খসরু বলেন, সরকার যখন ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কে ঋণ নেয়, তখন বেসরকারি খাতের জন্য ঋণপ্রাপ্তি কঠিন হয়ে পড়ে। এতে বিনিয়োগ কমে যায়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না এবং জনগণের আয় বাড়ে না। অর্থনীতির স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত হয়।
বর্তমান বৈদেশিক ঋণের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের বিদেশি ঋণ বর্তমানে ৩.৮ বিলিয়নের মতো। এই পরিস্থিতিতে আরও বৃহৎ বাজেট বাস্তবায়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বরং রাজস্ব ও ঋণ পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাজেটের আকার আরও ছোট হওয়া উচিত ছিল।
বাজেটের গুণগত মান নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে আমীর খসরু বলেন, আমরা আশা করেছিলাম অন্তর্বর্তী সরকার একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাজেট উপস্থাপন করবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সেই পরিবর্তন দেখিনি। এই বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ কাঠামোগত সমস্যাগুলো আগের মতোই রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, রাজস্ব আয়কে ভিত্তি করেই বাজেট প্রণয়ন করা উচিত। তাহলে বেসরকারি খাতে টাকার সরবরাহ থাকত, বিনিয়োগ বাড়ত, সুদের হার কমত, বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমত। কিন্তু আমরা সেই মৌলিক জায়গায় পৌঁছাতে পারিনি।
প্রসঙ্গত, অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সোমবার বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্টুডিও থেকে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন। এতে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৯ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাজেট ঘোষণার পরদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার (৩ জুন) অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের সঙ্গে বিস্তারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেবেন বলে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, বিএনপি ৪ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি