News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২২:৩৫, ১২ জুন ২০২৫
আপডেট: ২২:৪২, ১২ জুন ২০২৫

বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য সম্পর্কের নতুন দিগন্ত: ইউনূস-চার্লস বৈঠক

বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য সম্পর্কের নতুন দিগন্ত: ইউনূস-চার্লস বৈঠক

ছবি: সংগৃহীত

ব্রিটেন সফরে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 

চার দিনের এই সরকারি সফরের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে বৃহস্পতিবার (১২ জুন) লন্ডনের ঐতিহাসিক বাকিংহাম প্যালেসে ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে তার একান্ত বৈঠক, যা বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ২০ মিনিটে বাকিংহাম প্যালেসে শুরু হয় প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস ও রাজা চার্লসের বৈঠক। প্রায় আধা ঘণ্টার এই আলোচনাটি ছিল সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ। এ সময় তারা জলবায়ু পরিবর্তন, সামাজিক বৈষম্য, দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়নসহ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিস্তারিত মতবিনিময় করেন।

রাজা চার্লস বিশেষভাবে অধ্যাপক ইউনূসের ‘থ্রি-জিরো’ (শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব, শূন্য কার্বন নিঃসরণ) ধারণার প্রশংসা করে একে মানব সভ্যতার জন্য সময়োপযোগী একটি পথনির্দেশক প্রচেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেন। 

তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে জলবায়ু ও মানবিক সংকট মোকাবিলায় আমাদের একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে।

বৈঠক শেষে রাজা চার্লস ও কুইন ক্যামিলা অধ্যাপক ইউনূসকে স্বাক্ষরিত ছবি-সংবলিত একটি উপহার প্রদান করেন, যা রাজপরিবারের পক্ষ থেকে বিরল সম্মানের প্রতীক। একই দিন বিকেলে বাকিংহাম প্যালেসে অনুষ্ঠিত এক রাজকীয় অনুষ্ঠানে রাজা ইউনূসকে ‘হরমনি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ প্রদান করেন—সামাজিক ব্যবসা, ক্ষুদ্রঋণ ও দারিদ্র্য বিমোচনে আজীবন অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ।

প্রসঙ্গত, রাজা চার্লস বহু বছর ধরে ইউনূসের কাজের অনুরাগী। তিনি ইউনূসের একটি বইয়ের ভূমিকা লিখেছিলেন, যা তাদের মধ্যকার পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আদর্শগত মিলের প্রকাশ বলে মনে করা হয়।

সফরকালীন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের স্পিকার ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি অধ্যাপক ইউনূসের সফরসঙ্গীরা ব্রিটেনের জাতীয় অপরাধ দমন সংস্থা (NCA)-এর সঙ্গে বৈঠক করেন।

এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নামে থাকা প্রায় ১১ মিলিয়ন ডলারের একটি পাচারকৃত সম্পদ ইতোমধ্যে ফ্রিজ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: পরবর্তী সরকারের অংশ হওয়ার ইচ্ছা নেই: ড. ইউনূস

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বলে আমাদের ধারণা। এর বড় একটি অংশ ব্রিটেনে এসেছে। এসব অবৈধ সম্পদ দেশের জনগণের কল্যাণে ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে।

ড. ইউনূসের সফরের আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো আগামীকাল (১৩ জুন) সকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক। ধারণা করা হচ্ছে, এই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতা, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং কৌশলগত অবস্থান নিয়ে আলোচনা হবে। জানা গেছে, এই বৈঠকের জন্য উদ্যোগ এসেছিল প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকেই।

অন্যদিকে, ১১ জুন প্রধান উপদেষ্টার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের সঙ্গে বৈঠকের কথা থাকলেও, তাঁর কানাডা সফরে থাকায় সেটি এখনো অনিশ্চিত। তবে, সফরকালে ব্রিটিশ পক্ষ বাংলাদেশে চলমান সংস্কার ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের বিষয়ে গভীর আগ্রহ দেখিয়েছে।

সফরের শুরু থেকেই অধ্যাপক ইউনূসের অবস্থানকে ঘিরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা যায়। আওয়ামী লীগ সমর্থিত একটি দল তাঁর হোটেলের সামনে বিক্ষোভ করে এবং পদত্যাগের দাবি জানায়। এর জেরে নির্ধারিত ‘মতবিনিময় ও নাগরিক সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।

অধ্যাপক ইউনূস লন্ডনে পৌঁছান মঙ্গলবার (১০ জুন) সকালে। তিনি এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৫ মিনিটে হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সরকারিভাবে এই সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে যুক্তরাজ্যের সমর্থন নিশ্চিত করা এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার দিকটি জোরালো করা।

আগামী শনিবার (১৪ জুন) তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

রাজা চার্লসের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎ, আন্তর্জাতিক সম্মাননা অর্জন, অর্থপাচার ফেরত আনার কূটনৈতিক আলোচনা এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সমঝোতার প্রেক্ষাপটে বিএনপি নেতার সঙ্গে বৈঠক—এসব মিলিয়ে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চলমান যুক্তরাজ্য সফর বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়