News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৪:৩৫, ২৫ নভেম্বর ২০২০
আপডেট: ১২:০৭, ২৯ নভেম্বর ২০২০

স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতন মামলা: ফুল হাতে বাড়ি ফিরলেন ৪৬ দম্পতি

স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতন মামলা: ফুল হাতে বাড়ি ফিরলেন ৪৬ দম্পতি

১৬ বছর আগে বিয়ে হয় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পাগলা পশ্চিমপাড়া গ্রামের লিমা আক্তার ও জামাল মিয়ার। সংসারে তিন ছেলে আছে। বড় ছেলের বয়স ১২ বছর। সাত বছর আগে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝগড়ার একপর্যায়ে স্বামী তালাক দেন স্ত্রীকে। বাবার বাড়িতে চলে যান লিমা। একপর্যায়ে আদালতে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেন তিনি। বুধবার এই মামলা আপসে নিষ্পত্তি হয়। মামলা থেকে খালাস পেয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরেছেন জামাল মিয়া। রায় ঘোষণার পর আদালতের কর্মীরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান তাদের।

শুধু জামাল-লিমা দম্পতি নন, সুনামগঞ্জের ৪৬ দম্পতির সঙ্গে আজ এমনটা ঘটেছে। বুধবার সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন পারিবারিক নানা বিরোধে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে করা ৪৭টি মামলার রায় দিয়েছেন। এর মধ্যে এক ব্যক্তির দুই স্ত্রী, তারা দুজনই স্বামীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগে মামলা করেছিলেন।

মামলাগুলো আপসে নিষ্পত্তি হওয়ায় আদালত সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন। এতে করে স্বামীর ঘরে ফিরেছেন স্ত্রী। সন্তানদের কেউ কেউ ছিল মায়ের সঙ্গে, আবার কেউ বাবার সঙ্গে। এখন তারা মা–বাবা দুজনের সঙ্গে থাকবেন। তবে দম্পতিদের মানতে হবে কয়েকটি শর্ত। এ ব্যাপারে আদালতে লিখিত অঙ্গীকার করেছেন তারা।

শর্তগুলোর মধ্যে আছে তারা সন্তান ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে মিলেমিশে চলবেন, সংসারধর্ম পালন করবেন, স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে যথাযথ সম্মান দেবেন, শান্তি নষ্ট হয়, এমন কোনো কাজ আর করবেন না, স্ত্রী বা তার পরিবারের কাছে কোনো যৌতুক চাওয়া যাবে না, ছোটখাটো কোনো বিরোধ দেখা দিলে পারিবারিকভাবে বসে শান্তিপূর্ণ উপায়ে তা সমাধান করতে হবে, স্ত্রীকে কখনো নির্যাতন করা যাবে না আর যদি স্বামী নির্যাতন করেন তবে স্ত্রী আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

রায় ঘোষণার পর বিচারক মো. জাকির হোসেন বলেন, "মানুষের মধ্যে একটা ভুল ধারণা আছে যে, আইন-আদালত সৃষ্টি হয়েছে শুধু মানুষকে শাস্তি দেওয়া জন্য। মানুষের এই ধারণাকে পাল্টে দেওয়ার জন্যই আজকের এই রায়। আদালত যে শুধু শাস্তিই দেন না, মানুষের মধ্যে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দেন, সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে দিতে পারেন; এই রায়ে মানুষ সেটা অনুধাবন করতে পারবে। আজ এতগুলো পরিবার আবার একত্র হলো। স্বামী ফিরে পেলেন স্ত্রীকে, স্ত্রী পেল স্বামীকে। একই সঙ্গে সন্তানেরা পাবে মা–বাবার আদর-স্নেহ।"

রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে কথা হয় জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা ইয়াসমিন আক্তারের সঙ্গে। কোলে দেড় বছরের এক ছেলে, পাশেই ছিলেন স্বামী সেবুল মিয়া। ইয়াসমিন আক্তার বলেন, একদিন তুচ্ছ বিষয় নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে স্বামী তাকে মারধর করেন। বিষয়টি তার বাবা জেনে খুবই ক্ষুব্ধ হন। তিনি বাবার বাড়ি চলে যান এবং স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। আসলেই স্বামী যৌতুক চেয়েছিলেন কি না, জানতে চাইলে ইয়াসমিন বলেন, ‘রাগ করি মামলা করছিলাম। মামলাত হাছামিছা কওয়া লাগেই। এখন শেষ অইছে, ইটাই খুশি।’

সদর উপজেলার উসনপুর গ্রামের রাজ্জাক মিয়ার (৪০) দুই স্ত্রী। দুই তরফে সন্তান আছে সাতজন। দুই স্ত্রী কুলসুমা বেগম ও খোদেজা বেগম যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেন বছর দেড়েক আগে। মামলা দুটি আজ শেষ হয়েছে। তিনজনই আদালতের বারান্দায় একসঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলেন। রাজ্জাক মিয়া বলেন, স্ত্রীরা কথা না শোনায় মারধর করেছিলেন তিনি। এরপর তারা মামলা করেন। স্ত্রীদের নিয়ে মামলার পরও বাড়িতেই আছেন। আদালতে আসা-যাওয়া করেছেন একসঙ্গে। গাড়িভাড়াসহ সব খরচ তিনিই দিয়েছেন। এখন মামলাটি শেষ হওয়ায় তিনি খুশি। এ সময় পাশে থাকা খোদেজা বেগম বলেন, ‘আমরা না, তাইনের খাছলত খারাপ। কথায় কথায় হাত চলে। অখন থাকি বালা অইয়া চলবা খইছইন। দস্তখতও দিছইন। যদি হায়া অয় তাইলেই আমরা বাঁচলাম।’

আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নান্টু রায় বলেন, এই রায় একটা নজির। আদালত নিজে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের সহায়তায় এই মামলাগুলো আপসে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সংসারে বিভিন্নভাবে স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে নারীরা এসব মামলা করেছিলেন। মামলার কারণে পারিবারিক দ্বন্দ্ব-বিভেদ আরও বাড়ে। আদালতের ব্যতিক্রমী এ রায় সমাজে একটা ইতিবাচক বার্তা দেবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এএস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়