News Bangladesh

তথ্য-প্রযুক্তি ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৪:১৬, ৩০ মে ২০২৫

ভয়াবহ সৌরঝড়ের মুখে বিশ্ব: ঝুঁকিতে উপগ্রহ, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট

ভয়াবহ সৌরঝড়ের মুখে বিশ্ব: ঝুঁকিতে উপগ্রহ, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট

ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক সময়ে সূর্যের অভ্যন্তরীণ তাপীয় বিক্রিয়া অস্বাভাবিক মাত্রায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে, যা বিজ্ঞানী ও মহাকাশ গবেষকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সূর্যের এই বিশাল বিস্ফোরণসমূহকে বলা হয় ‘এক্স-শ্রেণির সৌরশিখা’ (X-Class Solar Flare), যা সবচেয়ে শক্তিশালী সৌর অগ্ন্যুৎপাতের মধ্যে পড়ে।

শক্তিশালী সৌরশিখা ও রেডিও বিভ্রাট
২০২৫ সালের ১৩ মে সকাল ১১টা ৩৮ মিনিটে সূর্যের AR4087 নামের একটি অতিসক্রিয় কালো দাগ (Sunspot) থেকে একটি X-1.2 মাত্রার সৌরশিখা নির্গত হয়। পরদিন, ১৪ মে, একই স্থান থেকে আরও শক্তিশালী X-2.7 মাত্রার শিখা পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে। এই সৌরশিখার প্রভাবে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে রেডিও সংকেত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সৌরশিখা থেকে উৎপন্ন বিকিরণ কয়েক মিনিটের মধ্যেই পৃথিবীতে পৌঁছায় এবং উচ্চতর বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ারে বিপর্যয় সৃষ্টি করে, যার ফলে বিমানের যোগাযোগ ব্যবস্থা, জিপিএস ও সামুদ্রিক নৌচলাচলের ন্যাভিগেশন ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

সৌরঝড় ও করোনাল মাস নির্গমন: সম্ভাব্য বিপর্যয়
এই সৌরশিখার সাথে যদি ‘করোনাল মাস নির্গমন’ (Coronal Mass Ejection - CME) যুক্ত হয়, তবে তা পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রে আঘাত হানতে পারে। এর ফলে ঘটতে পারে চরম বৈশ্বিক বিপর্যয়। 

আরও পড়ুন: টেলিকম বিপর্যয়: ডাউন ৫৯০৪ সাইট 

সম্ভাব্য ক্ষতির মধ্যে রয়েছে:

  • কৃত্রিম উপগ্রহ বিকল হওয়া বা স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়া
  • জাতীয় ও আঞ্চলিক বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার বিপর্যয়, ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া
  • মোবাইল ও ইন্টারনেট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া
  • ট্রেন, মেট্রো ও বিমানের চলাচলে বিঘ্ন
  • জ্বালানির সরবরাহে ব্যাঘাত এবং মূল্যবৃদ্ধি
  • ডিজিটাল লেনদেন ও আর্থিক খাতে বিপর্যয়
  • জিপিএস, ভূপর্যবেক্ষণ ও সামরিক উপগ্রহ কার্যক্রমে বিঘ্ন

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, এ ধরনের সৌরঝড়ের প্রভাবে ভারতীয় উপমহাদেশ, উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও মেরু অঞ্চলের রেডিও ও বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুতি: মহাকাশ আবহাওয়া মহড়া
এই সম্ভাব্য বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ৮ মে ২০২৪ সালে কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে আয়োজন করে ‘মহাকাশ আবহাওয়া প্রস্তুতি মহড়া’ (Space Weather Tabletop Exercise)। এতে অংশ নেয়:

  • এয়ার ন্যাশনাল গার্ড, ১৪০তম উইং ও ২৩৩তম মহাকাশ দল
  • জাতীয় সমুদ্র ও বায়ুমণ্ডল সংস্থা (NOAA)
  • স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগ (Department of Homeland Security)

মহড়ায় এমন একটি কল্পিত পরিস্থিতির চর্চা করা হয়, যেখানে ২০২৮ সালের জানুয়ারিতে এক ভয়াবহ সৌরঝড়ে পুরো আমেরিকার বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও জরুরি সেবা একযোগে ভেঙে পড়ে। লক্ষ্য ছিল, সংকট মোকাবেলায় দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার উপায় নির্ধারণ।

বিজ্ঞানীদের সতর্কতা ও সুপারিশ
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাস্তবেও যদি এমন একটি সৌরঝড় পৃথিবীতে আঘাত হানে, তবে তা ১৯৮৯ সালের কিউবেক ব্ল্যাকআউট বা ১৮৫৯ সালের ক্যারিংটন ইভেন্টের চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে। তারা বিশ্বব্যাপী আগাম প্রস্তুতির ওপর জোর দিয়েছেন—যেমন:

  • উপগ্রহ ও বৈদ্যুতিক অবকাঠামোর নিরাপত্তা জোরদার
  • মহাকাশ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ জোরদার করা
  • জরুরি পরিস্থিতিতে বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা

প্রযুক্তিনির্ভর এই পৃথিবীতে সূর্যের একটি অস্বাভাবিক আচরণও ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাই বিজ্ঞানীদের আশঙ্কাকে হালকাভাবে না নিয়ে এখনই বৈশ্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রয়োজন, যাতে আগামী দিনে এক মহাজাগতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হয়।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়